ক্রুব্ধ গর্জন আর প্রলয় নৃত্য, বৃষ্টির অবিরাম শব্দে চলছে আগমনী প্রস্তুতি। সে আসছে, স্বয়ং শয়তান। গ্রামের বাইরের ঘন জঙ্গল। সন্ধ্যার পর সাধারণত কেউ আসে না এদিকে। তাই এক প্রকার জনমানবশূন্য হয়ে পড়ে এই জায়গা। এখন প্রায় মধ্যরাত, তুমুল বর্ষণ হচ্ছে। সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যাবার মতো বৃষ্টি। আকাশে মেঘ জমে রাতের আঁধার আরও ঘন হয়ে গেছে। ঘোর অন্ধকার চারিদিকে। বৃষ্টি হলেও বাতাসের বেগ তেমন একটা নেই। গাছের পাতায় বৃষ্টির ফোঁটার শব্দ। মোহময় বৃষ্টির জলের শব্দ। অনেকক্ষণ ধরে শুনলে ঘোর লেগে যায়। জঙ্গলের অনেক গভীরে কিসের যেন শব্দ হচ্ছে। বৃষ্টির শব্দ ছাপিয়ে ভেসে আসছে সেই শব্দ। অনেকটা গোঙানি আর কান্নার মতো। একপর্যায়ে ভেসে এল আর্ত চিৎকার। মেয়েলী সেই চিৎকার ভেসে আসছে জঙ্গলের গভীর থেকে। আশে পাশে কারো কোন চিহ্ন দেখা যাচ্ছে না। দীর্ঘ সময় ধরে চলল সেই গোঙানি আর দাপাদাপির শব্দ। তারপর হঠাৎ করেই যেন মিলিয়ে গেল সব। শুধু বৃষ্টির অবিরাম বর্ষণের শব্দ ছাড়াএখন আর কোন শব্দ নেই। ঘন হয়ে থাকা গাছগুলোর ডাল বেয়ে জল নেমে যাচ্ছে মাটিতে। মাটিতে জলের হালকা স্রোত বয়ে যাচ্ছে। ভেসে যাচ্ছে ঝরা পাতা সেই জলের স্রোতে। ক্রমে বৃষ্টির তেজ কমে গেল। এখন গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। আকাশে মেঘের গর্জন শোনা যাচ্ছে একটু পরপর। অদূরেই একটি বাজ পড়ল। কালো আকাশে মুহূর্তেই সাদা নীলাভ আলোর রেখা চিরে দিল। বাজের শব্দে পাখিদের আওয়াজ শোনা গেল জঙ্গলের ভেতর থেকে। আর কোন আওয়াজ আসছে না। সব কিছু যেন নীরব নিথর হয়ে পড়ল। ধীরে ধীরে থেমে গেল বৃষ্টি। পরিষ্কার হতে শুরু করেছে আকাশ, সেই সাথে অপেক্ষা করছে ভোরের। এগিয়ে আসছে ভোরের সময়।