নারী বিশ্ব জনসংখ্যায় সংখ্যাগরিষ্ঠ হয়েও যাপন করে সংখ্যালঘুদের জীবন। কন্যা-জায়া-জননীÑসর্বরূপে সর্বকালে জীবন পার করতে হয় উৎকণ্ঠা আর শঙ্কায়। ‘সে যুগ হয়েছে বাসি / যে যুগে পুরুষ দাস ছিল না ক’, নারীরা আছিল দাসী।’ কিংবা ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর / অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।’ জাতীয় কবি নজরুল তার কাব্যে নারীকে যে মহিমা দিয়েছেন মহাকালের আবর্তনে আজ তার কতটুকু পূরণ হয়েছে? টিকে থাকার ভিত্তি তৈরির জন্য আজও পরিবার এবং সমাজের সঙ্গে প্রতিনিয়ত নীরব যুদ্ধে নিয়োজিত থাকতে হয় নারীকে। নারীরই গর্ভে সঞ্চারিত মানবজাতি নিগ্রহের প্রথম লক্ষ্যবস্তু করে নারীকেই। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তাদের কাটাতে হয় নিপীড়িত হওয়ার শঙ্কা নিয়ে। ভয়-দ্বিধা-দ্বন্দ্ব-সংঘাতে টিকে থাকার সংগ্রামে তারা বুঝতে পারে না পুরো জীবন কেমন করে কোথা দিয়ে কেটে গেল। নারী জীবনের দিনরাত্রি যুগ-যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে যেন আটকে আছে সেই একই গোলকধাঁধায়। সামান্য আশ্রয় এবং নিরাপত্তার জন্য তাকে হন্যে হয়ে ঘুরতে হয় দ্বারে দ্বারে। অথচ যোগ্যতা বা বুদ্ধিমত্তায় নারী কোনো অংশে কম নয়। কেবল নিজ আত্মবিশ্বাসের অভাবে অনন্তকালের বিড়ম্বনা তাদের ললাট-লিখন হয়ে আছে। অনাদিকালের নির্ভরতা আত্মশক্তি বিকাশের অন্তরায়। নারীশক্তিই একমাত্র সমাজ-সংসারে তাদের স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশের বাধা দূর করতে পারে। সেই আলোকে লিখিত ‘জীবনের দিনরাত্রি’ একটি সুখপাঠ্য উপন্যাস। বাস্তবতার প্রেক্ষাপট সামনে রেখে রোজি চরিত্রটি চিত্রায়নের চেষ্টা করা হয়েছে। ব্যক্ত হয়েছে নারী জীবনের স্বাভাবিক আকুতি এবং সংগ্রামের কথা। রোজির দগ্ধ জীবনের উত্তাপ হয়তো প্রশমিত করতে পারে জীবনের দিনরাত্রিতে।