স্নেহা আর সাবেরা খাতুনের জীবন খুব একটা সহজ ছিল না। এর মাঝেই নেমে আসে ভয়াবহ বিপদ। পরিবারের সাথে অভিমান করে দীর্ঘদিন প্রবাসে কাটায় শুভ্র। মিথ্যে অহংকারের চাদর গায়ে জড়িয়ে দিব্যি দিন কাটাচ্ছিল নিধি। স্নেহা আর সাবেরা খাতুনের বিপদ কি কেটে যায়? অভিমান ভুলে শুভ্র কি দেশে আসে? নিধি কি পারে তার অহংকারের চাদর খুলে দূরে ছুড়ে ফেলে দিতে? শুভ্র কি তার কল্পনার মায়াবতীকে খুঁজে পায়? সবার জীবন থেকে কালো মেঘ সরে গিয়ে চাঁদ উঁকি দিয়েছিল যে রাতে সে রাতটাই ছিল পূর্ণিমার!
আপুর হরর জনরার বইগুলো বরাবরই দেখে অভ্যস্ত। তবে পড়ার সুযোগ হয়েছিলো কেবল ❝দ্য আইশ্যাডো বক্স❞ বইটি পড়েই খুব ভালো লেগেছে আমার। আপু লিখা দ্বিতীয় উপন্যাসিকাটি পড়ার আগেও ভেবেছিলাম এটা হয়তো হরর বা থ্রিলার হবে। কিন্তু পড়ার পর বিস্মিত হয়ে গেলাম যে আপু রোমান্টিক জনরার বইও এত্য দারুণ লিখেন। এক কথায় অসাধারণ লেগেছে। ❤️
Read all reviews on the Boitoi app
সালসাবিলা নকির থ্রিলার এবং হররের সাথে আমি সুপরিচিত। চমৎকার লিখেন এই জনরা। এই প্রথম লেখককে রোমান্টিক জনরায় লিখতে দেখলাম। এবং বলতেই হয় চমৎকার গল্প সাজিয়েছেন। এমনই আরও চমৎকার লেখার অপেক্ষায়
❝এমন যদি হতো আমি পাখির মতো, উড়ে বেড়াই সারাক্ষণ।❞ সদা হাস্যোজ্জ্বল স্নেহা পাখির মতোই সারাদিন উড়ে বেড়াতো। বাবা বশির উদ্দিন বাধ সাধলেও মা সাবেরা খাতুন সবসময় পক্ষে ছিলেন। মেয়েকে তিনি স্বাধীন-স্বাবলম্বী বানাবেন এই তার পণ। সারাজীবন স্বামীর অত্যাচার সহ্য করে বেঁচে থাকা সাবেরা খাতুন মেয়েটাকে সুখী দেখতে চেয়েছেন, এই হলো তার অপরাধ৷ নয়তো মাত্র অনর্স পড়ুয়া স্নেহাকে কে যাবে বাণ মারতে! মাঝরাতে মেয়েটা কেমন পাগল পাগল করে, মোবাইল ফোনের শব্দে চিৎকার চেঁচামেচি করে। সবাই আড়ালে আবডালে স্নেহাকে "পাগল" বলা শুরু করে। মেয়েকে বাঁচাতে শরণাপন্ন হন কবিরাজের, সে তাকে জানায় কলেজের কেউ স্নেহাকে বাণ মেরেছে, যেনতেন বাণ না, একদম মরণ বাণ! স্নেহা ওই ছেলের না হলে আর কারো যাতে না হয়। সাবেরা খাতুন জানেন কে সেই ছেলে, পাড়ারই এক মাস্তান। বশির উদ্দিন টাকার লোভে স্নেহাকে প্রায় এই ছেলের কাছে বেচেই দিয়েছেন। এইতো ক'দিন পরেই বিয়ে, তারিখও ঠিক করে ফেলেছেন। সাবেরা খাতুন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন, মেয়েকে বুঝি আর বাঁচাতে পারলেন না তিনি! উঁহু, তিনি না বাঁচাতে পারলেও লন্ডনে জব করা শুভ্র কিন্তু ঠিক বাঁচিয়ে দিয়েছে, মাস্তানের হাত থেকে এবং মানসিক অসুস্থতার কবল থেকেও! কিভাবে লন্ডনে থাকা কেউ বাংলাদেশের স্নেহাকে উদ্ধার করে আর কোন সূত্রেই বা তাদের পরিচয় হয় জানতে হলে পড়তে হবে সালসাবিলা নকির ই-বুক "সে রাতে রাত ছিল পূর্ণিমার"। ❝ঘৃণার এই সংসারে ভালোবাসা হলো সেই বিপ্লব যা সব কিছু কাটিয়ে তুলতে পারে।❞ সাবেরার মতো সবার জীবনে এই ভালোবাসার বিপ্লব আসে না, আবার কারো জীবনে আসলেও নিধির মতো তারা মূল্যায়ন করতে জানে না। অন্যদিকে স্নেহার মতো কারো জীবনে এ বিপ্লব যেন এক আশীর্বাদ। এই গল্পটি অনেকগুলো মানুষকে এক সুতোয় বাঁধার গল্প। এটি লৌকিক-অলৌকিক মিশ্রণের গল্প। প্রথমে মনে হয়েছে গল্পটি ভৌতিক, পরবর্তীতে মনে হয়েছে রোমান্টিক, সবশেষে দেখলাম এটি সমকালীন। লেখিকা আমাদেরকে একটি পরিবারের আড়ালে সমাজে ঘটে আসা অসংখ্য অপরাধ, নারীর অধিকার, কুসংস্কার, মিথ্যাচার এবং পারিবারিক বন্ধন সম্পর্কে সচেতন করেছেন। ব্যক্তিগতভাবে বইটি আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। এক বসায় পড়ে শেষ করার মতো এবং বইটি যেকোনো বয়সী পাঠকের জন্যই দারুণ উপভোগ্য। হ্যাপি রিডিং! ▪️নাম: সে রাতে রাত ছিল পূর্ণিমার ▪️লেখিকা: সালসাবিলা নকি ▪️জনরা: সমকালীন ▪️অধ্যায়: ১৬ টি ▪️ই-বুক মূল্য: ৬০ টাকা ▪️প্রাপ্তিস্থান: বই-টই