১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে পরাজিত হয়ে যখন বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয় তখন বেনিয়ার বেশে এই সুখী-সমৃদ্ধ, শস্য-শ্যামলা বাংলার মাটিতে আবির্ভাব হয় তথাকথিত ও স্বঘোষিত সভ্য জাতির মুখোশ পরা ব্রিটিশ নামধারী এক হিংস্র হায়েনার। সে শুধু বাংলার অবারিত ধন-সম্পদই লুট করেনি, উপরন্তু এদেশের সাধারণ মধ্যবিত্ত, জমিদার, কৃষক, জেলে, তাঁতিসহ সকল প্রকার মানুষ ও সমাজ-সংস্কৃতিকে ছিঁড়ে খুবলে খুবলে খেয়েছে। যে বাংলায় কিছুদিন আগেই ছিলো গোলা ভরা ধান আর পুকুর ভরা মাছ সেখানে ব্রিটিশদের অত্যাচার ও নিপীড়নে রাতারাতি জমিদার পর্যন্ত কপর্দকহীন ও বাস্তুহারা হয়ে পড়ে। বক্সারের যুদ্ধে পরাজয়ের পর এবং নব্য আবির্ভূত নীলকরদের সীমাহীন অত্যাচার ও লুট-পাটের কারণে ১৭৬৯ সালে (বাংলা ১১৭৬) বাংলায় দেখা দেয় এক ভয়াল দুর্ভিক্ষের কালো ছায়া। শুরু হয় ছিয়াত্তরের মন্বন্তর। তার সাথে আবার যুক্ত হয় ওলাবিবি (কলেরা), ঠগি ও জলের উপর হত্যা করা পাঙ্গু ঠগিদের অত্যাচার। ফলশ্রুতিতে গ্রাম-বন্দর উজাড় হয়ে রাস্তা-ঘাটে, নদীতে পড়ে থাকা মানুষের লাশ এখন হয়ে ওঠে কাক-শকুনের উদরপূর্তির খোরাক। এমনই এক ভয়ংকর সময়ে রংপুরের প্রাচীন জমিদার পরিবারের শেষ চিহ্ন ও বক্সারের যুদ্ধের সেনাপতি আহমাদ নকীব চৌধুরী এবং তাদের নায়েবের ছেলে লখাইকে নিয়ে বাঁচার জন্য কলকাতার উদ্দেশ্যে রওনা হয়। কারণ এতসব বিপদের মধ্যেও নতুন এক বিপদ আবির্ভূত হয় তা হলো আদমখোরদের অত্যাচার! পদে পদে মৃত্যুর হাতছানিকে পাশ কাটিয়ে তারা এগিয়ে চলে তাদের গন্তব্য পানে। অন্যদিকে বাংলার বুলবুল খ্যাত জোহরাও একই উদ্দেশ্যে কয়েকজন সঙ্গীকে নিয়ে পথে নামে। হয়তো এত বিপদকে মোকাবেলা করে তারা নতুন গন্তব্যে পৌঁছাবে নতুবা এই শেষযাত্রাটিই হবে তাদের অন্তিমযাত্রা।