বৌদ্ধ-সংস্কৃত সাহিত্য ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে যাঁরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন, তাঁদের মধ্যে অশ্বঘোষ অন্যতম। তাঁর জীবন ছিল বহু ধারার মিলনস্থল, যেখানে ব্রাহ্মণ্য ও বৌদ্ধ—এই দুই ভিন্নমুখী জীবনচর্যা একসঙ্গে প্রবাহিত হয়েছিল। এ দুটি বিপরীতমুখী আদর্শ তিনি তাঁর জীবনে এমনভাবে ধারণ করেছিলেন, যা তাঁর অন্তর্দৃষ্টি প্রজ্ঞালোকে উদ্ভাসিত করেছিল এবং সৃজনশীলতাকে মহিমামণ্ডিত করেছিল। অশ্বঘোষ শুধু বেদ ও পুরাণশাস্ত্রের পণ্ডিত ছিলেন না; বৌদ্ধশাস্ত্র, দর্শন, কলাবিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, আয়ুর্বেদ, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, ভূগোল, ছন্দ, অলংকার, ব্যাকরণসহ বহু শাস্ত্রে তাঁর অসাধারণ জ্ঞান ছিল। বহুমুখী জ্ঞানের অধিকারী এ মহান প্রতিভাধর ব্যক্তি সাহিত্যের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সমৃদ্ধি এনে দিয়েছিলেন এবং প্রাচীন ভারতের সাহিত্যজগৎকে আরও ঐশ্বর্যময় করেছিলেন। তাঁর সৃজনশীলতার পরিধি ব্যাপক। মহাকাব্য, গান, নাটক, ধর্মীয় প্রচার, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন—এসব ক্ষেত্রেই তিনি কীর্তিমান। তাঁর সাহিত্যকর্ম প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং বৌদ্ধ ধর্ম-দর্শনের এক অমূল্য সম্পদ হিসেবে বিবেচিত। যদিও তিনি বহু পরিচয়ে খ্যাত, "মহাকবি" অভিধাটি তাঁর সর্বাধিক পরিচিতি এনে দিয়েছে এবং এই নামেই তিনি ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন। তাঁর রচিত কালজয়ী সাহিত্যকর্ম পাঠের মাধ্যমে আমরা তাঁর জীবন ও কীর্তি সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেতে পারি।