দু’মিনিট পর শাওন চোখ খুলে তাকাল। এক পা, দু’পা করে নিজেকে এগিয়ে নিতে লাগল সেই জিনিসটির দিকে। যতই এগোচ্ছে, ততই জিনিসটা তার চোখের পর্দায় স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হয়ে ধরা দিচ্ছে। চার হাত সামনে এসেই শাওন হাঁটা বন্ধ করল, থেমে গেল পা জোড়া। তবে চোখের পলক এখন আর পড়ছে না। ডান হাতে ধরে রাখা ফোনের ক্রমাগত নড়াচড়া বলে দিচ্ছে, তার হাত কাঁপছে। নীরব এমন এক অবস্থায় তার হৃদকম্প স্পষ্ট শোনা যাচ্ছে। চোখের সামনে শুধু ভাসছে সেই জিনিসটি, যা সে এতক্ষণ দূর থেকে দেখেছে। প্রায় পঁচে যাওয়া এক মানবদেহ—মস্তিষ্ক সম্পূর্ণ মাংসবিহীন, কঙ্কাল মাথাটা স্পষ্ট। পুরো শরীরের যতটুকু মাংস আর চামড়া বাকি আছে, তাতে কোটি কোটি ক্ষুদ্র কীট কিলবিল করছে। মাছির ভনভন শব্দ শাওনের কানে যেন এখন আরও তীব্রভাবে বাজছে। দুর্গন্ধ এখন যেন তার নাকে লাগছেই না। আপাতত সে অসাড় হয়ে গেছে এমন এক দৃশ্য অবলোকন করে। মস্তিষ্ক পুরো ফাঁকা লাগছে। এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন আগে কখনো হয়নি সে। হঠাৎই রুমাল আরও জোরে নাকে ঠেসে ধরে উল্টো ঘুরে শাওন প্রাণপণে দৌড়াতে শুরু করল। টালমাটাল অবস্থার কারণে দু-একবার হোঁচট খেল সিঁড়ি থেকে নামার সময়। নিজেকে সামলে নিয়ে দ্রুত বাড়ির বাইরে বেরিয়ে এল সে। বাইক যেখানে রাখা, তার থেকে দু’হাত দূরে গিয়ে মুখ থেকে রুমাল সরিয়ে নিচু হয়ে অনর্গল বমি করতে লাগল। দু’হাত হাঁটুর ওপরে দিয়ে নিজেকে ঠিক রাখছে শাওন। টানা এক দমে বমির সঙ্গে সকালের সব খাবার বেরিয়ে গেল। ঠোঁট দুটো ফাঁক করে অনবরত শ্বাস নিচ্ছে সে। চোখ দুটো বন্ধ, চোখের কোণে জল জমে আছে। আর পারল না শাওন। ভার ছেড়ে হাঁটু ভাঁজ করে ঘাসের ওপরে বসে পড়ল। হাতের কম্পন এখনো বন্ধ হচ্ছে না। ভয়জড়িত শরীরটা হেলে পড়ল নরম ঘাসে। রুমালটা মাথার কাছে আর ফোনটা এখনো ডান হাতেই রয়ে গেছে। বন্ধ রাখা দুই চোখ হঠাৎ ফট করে খুলে ফেলল শাওন। চোখের পর্দায় সেই ভয়ানক দৃশ্যটা ছবির মতো ভাসছে। মুহূর্তেই শরীরের প্রতিটি লোমকূপ খাড়া হয়ে উঠল তীব্র ভয়ে। এখন কী করবে সে?