উচ্চাকাঙ্ক্ষার বলি মনীষা। ক্ষমতাবানদের জগতে আনকোরা। লোভী শোয়েবের ফাঁদে পা দিয়ে হারালো জীবনের সমস্ত সুখ, শান্তি আর সামাজিক সম্মান। হারিয়ে ফেলল প্রিয়তম সজিবের প্রেম আহ্বান। নতুন সংসারের হাতছানি। গোঁয়ার সাঈদের একপেশে ধারণা আর রোষানলে পুড়ে হলো ছাই। নিয়তির নির্মম পরিহাসে পালিয়ে বেড়ানোর দিনগুলোতে কাকতালীয়ভাবে বিয়ের প্রস্তাব এলো সেই সাঈদের পরিবার থেকেই। যার কারণে মনীষা সব হারিয়ে দেউলিয়া। বিপর্যস্ত মনীষার ভেতর জ্বলে উঠল প্রতিশোধের আগুন। স্বেচ্ছায় রাজি হয়ে গেল বিয়েতে। বাসর রাতে সত্যের পর্দা উঠল। সাঈদ জানলো মনীষা সেই ভ্রষ্টা রমণী, যাকে সে অপমান করে তাড়িয়ে দিয়েছিল। প্রচণ্ড ক্ষোভে ফেটে পড়ল সে। সমাজ, সংসার, সম্মানের কারণে চেপে গেলেও লোভী শোয়েব পুনরায় সুযোগ গ্রহণ করতে পিছপা হলো না। স্বামী-স্ত্রীর এক জটিল মানসিক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে এলো এক কঠিন সত্য। ঘৃণা জন্ম নিলো ভালোবাসায়। শেষ পর্যন্ত জানতে হলে পড়ুন এক অন্যরকম ভালোবাসার গল্প।
শত্রু তুমি বন্ধু তুমি" ই-বুক পড়ে আমার একটা কথাই মনে হচ্ছে, এ জগতে যারা সহজ-সরল তাদের জীবন বড় জটিল হয়ে যায়, ঠিক জটিল হয়ে যায় না বরং জটিল করে দেওয়া হয়। আর যারা ধুরন্ধর, তারা কী সুন্দর জীবনযাপন করে! বড় অবাক লাগে আমার! আমি এ দুনিয়ায় চেয়ে দেখেছি, ঠিক এমনটাই ঘটে। যারা নির্বিবাদী মানুষ, সাধারণ জীবনযাপন করতে চায়, তাদের জীবনে আসে যত সব বিপত্তি। আর যারা ধান্দাবাজ, স্বার্থপর তাদের জীবন কী নির্ঝঞ্জাট! সবার সামনে তারা থাকে সাধু। দুনিয়াটা আসলেই একটা ধোঁকা! রুবি আপুর লেখায় আমি বরাবর বাস্তবতার দেখা পাই। এই বইয়ে বাস্তবতা একটু বেশিই প্রকট মনে হয়েছে। গল্পের প্রধান চরিত্র মনীষা। যার অসহায়ত্ব কল্পনা করে আমার হৃদয় ভেঙে যায়। এখনো চোখে অশ্রু জমতেছে। এই বইয়ের মতো কোনো বই আমাকে এতোখানি প্রভাবিত করেনি হয়তো! কোনো দোষ না করেও যখন সারাজীবন দোষ বয়ে বেড়াতে হয়, অপবাদ নিয়ে চলতে হয়, এরচেয়ে বড় যন্ত্রণা আর কী হতে পারে! মনীষার জীবন বিষাক্ত করে দেওয়া মানুষগুলো সমাজে কী সভ্য হয়ে বাস করতেছে! সাঈদকে ঠিক খারাপ মানুষ বলতে পারছি না কিন্তু মনীষার এই দূর্বিষহ জীবনের জন্য উনার দায় অবশ্যই আছে। নিজের ভাইয়ের দোষ ঢাকতে মনীষাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বিরাট অপরাধ করেছেন। আমাদের সমাজের এলিট শ্রেণির মানুষেরাও ঠিক এমনটাই করে! সাঈদ আর মনীষার জীবন একসূত্রে গেঁথে যাবে প্রথমে বুঝতে পারিনি। আমি আতঙ্কে ছিলাম, সাঈদ হয়তো চিনে ফেলবে! আর আমি ভেবেছিলাম শোয়েব লম্পট হয়তো বদলে গেছে...যেহেতু বিয়ে করেছে, বাবা হতে চলেছে, নিজের স্বভাব হয়তো পরিবর্তন করেছে। ভেবেছিলাম সাঈদের কাছে সব সত্য বলে দেবে। কিন্তু ঐ লম্পট করলো কী! আসলে যারা লম্পট তারা জীবনের শেষ সময় পর্যন্তই লম্পট থাকে। নাহলে রাস্তাঘাটে, গাড়িতে যুবকদের চেয়ে মধ্যবয়সী লম্পটরা সুযোগ বেশি খুঁজতো না! অবশ্যই ব্যতিক্রম আছে। কেউ কেউ সত্যি ই বদলে যায়। বাট এক্সেপশন ইজ নট অ্যান এক্সাম্পল... আমার খুব ইচ্ছে করছে মনীষাকে সবার সামনে নির্দোষ প্রমাণ করতে। মনীষার কোনো অপরাধ ছিল না। এটা যদি সাঈদের মতো সজিবও জানতো! লাভলী আর শোভাও (অবশ্য এদের প্রতি আমার বিতৃষ্ণা আছে)। কিন্তু কিছু মানুষকে দোষ না করেও অপরাধী থাকতে হয়। অপবাদ গায়ে নিয়ে সারাজীবন কাটাতে হয়। দুনিয়াতে আর কোনোদিন প্রমাণ হয় না। প্রমাণ হবে কেবল ইয়াওমিদ্ দীন এ। সেদিন কেউ কিছু লুকাতে পারবে না। অণু পরিমাণ কিছু না! বইটা পড়া শেষ করে এগুলো ভাবতে গিয়ে গাড়িতেই আমার দু'চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে গিয়েছিল। অশ্রু চোখে রৌদ্রোজ্জল নীল আকাশ দেখতে দেখতে ভেবে চলছিলাম মনীষার জীবনের সমীকরণ! বাড়িতে ফিরে বইয়ের কথা ভাবতে গিয়ে বিকেলে আমার কী যে মন খারাপ ছিল! বুকের ভেতর হু হু করে উঠছিল বারবার। আমার চোখে এই বইটা একদম জীবন্ত হয়ে ধরা দিয়েছে। আমি কেবল ভাবতেছিলাম মনীষার মতো সেইসব মনীষাদের কথা, যারা কিছু না করেও চরম অপরাধী হয়ে এ দুনিয়ায় বেঁচে আছে জীবন্মৃতের মতো! তাদের যন্ত্রণা ঠিক কতটুকু, তাদের হৃদয়ের ব্যথা ঠিক কতটুকু! বইটা পড়া শেষ করে আমার মনে হয়েছে একটু তাড়াতাড়িই শেষ হয়ে গেছে। আরেকটু পড়ার ইচ্ছে ছিল। মনীষার মুখ থেকে সেদিনের সব কথা, মনীষার জীবনের সেই পাঁচ বছর সাঈদের শোনা দরকার ছিল। শোয়েবের একটা পরিণতি দেখতে চেয়েছিলাম। সেই সাথে লাভলী আর শোভার পাঁচ বছর পরবর্তী বর্তমান অবস্থা একটু দেখতে চেয়েছিলাম। আর সজিব! মনীষার জীবনে যে এসেছিল আশা হয়ে কিন্তু বিশ্বাস নিয়ে আসেনি। পাঁচ বছর পরের দৃশ্যপটে ওকে একটু দেখতে চেয়েছিলাম। আর মনীষার জীবনের বিভীষিকাময় অধ্যায়গুলো দেখেছি বলে একটু সুখের জীবনটাও দেখার লোভ জেগেছে। যদিও বাস্তবতা এমন নয়। কিন্তু গল্পতে একটু সুখী জীবনে দেখলে খুব ক্ষতি হয়ে যাবে না হয়তো! এই বইয়ের আরেকটা পার্ট চাই আপু...
Read all reviews on the Boitoi app
Apa র বই কিনে কখনো হতাশ হই না, ভাল লেগেছে. মনে হইসে আরও বড় হত যদি.
বই পড়ে অনুভূতি অবশ্যই ইতিবাচক।ব্যাক্তিগতভাবে আমি লেখিকার অনেক পুরোনো একজন পাঠিকা,অনলাইন এবং অফলাইনে।ওনার অধিকাংশ বই,ই-বুক,অনলাইন লিখা আমি পড়েছি সেক্ষেত্রে আমার একটি বড় অভিযেগ হচ্ছে নায়ক নায়িকা তাদের জীবনে অনেক কষ্ট করে, হারাম জীবনযাপন করে যখন হালাল সম্পর্ক হয়,বৈধ পরিণতি পায় তখনই উপন্যাস শেষ।হালাল নিয়েও তো একটু বেশি লিখা উচিত।তাতে ইতিবাচক মেসেজ আরও পাবে মানুষ।এক্ষেত্রে আমি দাবি করব তাদের হালাল জীবন নিয়েও কিছুটা লিখতে।
আপুর গল্প মানেই অসাধারন।এই গল্পটিও ভীষণ সুন্দর❤অনেক ভালো লেগেছে।
সমাজের কালো অধ্যায় নারী জাগরণের নামে নারীকে ভোগ্যপণ্য বানানোর যে চিত্র সেই চিত্রকে যে মুখোশ দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয় তার নাম হলো আধুনিকায়ন এবং নারীর উচ্চশিক্ষা। আর এই মুখোশের আড়ালের গল্পটাই হলো " শত্রু তুমি,বন্ধু তুমি"। পরিশিষ্টে সুন্দর একটি রোমান্টিক গল্প হলেও আমাদের সমাজে এরকম মনীষা,লাভলী,শোভা আপা আর শোয়েবদের অভাব নাই। গল্পের শেষে মনীষা আশ্রয় পেলেও দিনশেষে মনীষারা হয়ে উঠে লাভলীর মতো ছাত্রীনেত্রী বা শোভা আপা নইতো স্রোতের টানে অস্তিত্বহীন খড়কুটোর মতো ভেসে যায়।। গল্পের সমাপ্তিতে তাড়াহুড়োর ছাপ স্পষ্ট যেখানে গল্পের শুরুতে সবকিছুতে বর্ণনা বেশি থাকলেও গল্পের শেষের ধাপে পাঠকের আকাঙ্ক্ষা রয়ে যায়।কারণ পাঁচ বছরের সাঈদের মনে জমা ঘৃণা, আর মনীষার কষ্ট দুটো মিলে ওদের আর একটু সংসার জীবন দেখার ইচ্ছা ছিলো।যেনো সাঈদ ধাপে ধাপে মনীষাকে চিনতে পারে। আর সাঈদের ক্যারেক্টারটা যেনো সেই 'ধরি মাছ না ছুয় পানি' গল্পের নামের সাথে খাপে খাপ,ভালো লেগেছে এটা। কিন্তু ভাইয়ের কুকীর্তি আড়াল করা মানা গেলেও বউয়ের এতো বড় ক্ষতি করার জন্য হলেও ভাইটাকে একটু বেশি শাস্তি দিলে ভালো লাগতো।। তবে শেষ টা জাস্ট সাসপেন্স!! সবমিলিয়ে একাধিকবার পড়ার মতো একটা ইবুক এটা।।
অসাধারন হয়েছে।
Eto choto ken!!!
অসাধারণ! আল্লাহ লেখিকার কলমে বারাকাহ দিন। এতটুকু উপলব্ধি করে এত ভালো লাগে যে, শুধুমাত্র সৎ থাকলে / সৎ থাকার চেষ্টা করলে আল্লাহ তা'য়ালার কত সাহায্য যে পাওয়া যায়!সুবহানাল্লাহ!
আপুর গল্প সবসময়ই সুন্দর। আর অন্যান্য লেখিকা দের তুলনায় আমি বলব বই এর দাম অনেক কম রেখেছেন। এই গল্প টা বিগত স্বৈরশাসনের সমাজব্যবস্হা মনে করিয়ে দিল। যেখানে পতিতাবৃত্তি ছিল রাজনৈতিক অংগনে উপরে উঠার চাবিকাঠি। সাঈদকে এখানে আদর্শ মেনে চলা পুরুষ দেখানো হলেও আমার কাছে তাকে ভন্ড মনে হয়েছে যে পবিত্রতা শুধু মেয়েদের জন্য সীমাবদ্ধ বলে মনে করে। সে চরিত্রবান হলে শোয়েব এর কুকর্ম অতীতে ঢেকে রেখে তাকে ধর্ষক বানাতো না। আর পরবর্তীতে সে তার বিবাহিতা স্ত্রীর দিকে হাত বাড়িয়ে আবার ধর্ষনের চেষ্টা করলে তাকে অন্তত সেই সময় সারা জীবনের পাপের শাস্তি দিত। প্রতিটা অপরাধীরই নির্দোষ পরিবার থাকে। সেটা তাদের পাপ লঘু করেনা। সেই তুলনায় মনীষাকে শক্ত, সৎ, নীতিবান এবং অন্যায়ের সাথে আপোষহীন কিন্তু সমাজের ভিক্টিম মনে হয়েছে। আর সাঈদের মত পুরুষ রা সারাজীবন বৌকে সন্দেহ করে এবং তাদের কাছে নিজের পরীক্ষা দিতে হয় তার বৌকে। শোয়েব কে ছেড়ে দেওয়া গল্পের সবচেয়ে দুর্বল পয়েন্ট ছিল।
ভালো লাগলো অনেক ধন্যবাদ