মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন গঠিত ‘ন্যাপ-কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের যৌথ গেরিলা বাহিনী’-তে প্রায় উনিশ হাজার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত গেরিলা যোদ্ধা অংশগ্রহণ করেন। দেশের প্রতিটি প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে তারা বিভিন্নভাবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। কেউ সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন, কেউ জরুরি তথ্য আদান-প্রদান, ওষুধ ও বস্ত্র সংগ্রহ ও সরবরাহ করেন, আবার কেউ আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসায় সহায়তা করেন। আমার শ্বশুর আবদুল হালিম ছিলেন এই গেরিলা বাহিনীর একজন সাহসী সদস্য। তিনি ফেনী জেলার দাগনভূঞা উপজেলার রাজাপুর, জয়নারায়ণপুর, পূর্ব জয়নারায়ণপুর, দীঘির জান, দুই সতীনের দীঘি, কোরাইশমুন্সী এবং ফেনী সদরের পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের মাথিয়ারাসহ বিভিন্ন এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। রাজাপুর এলাকায় তিনি রাজাকারদের হাতে ধরা পড়েন এবং চরম নির্যাতনের শিকার হন। ইউনিয়ন পরিষদের পুরনো বোর্ড অফিসের পেছনে নদীর পাড়ে একটি গাছের সঙ্গে বেঁধে তাকে গুলি করা হয়। তার চোখের সামনেই মাথিয়ারা এলাকার সহযোদ্ধা আলী আরশাদ গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যুযন্ত্রণা ভোগ করতে করতে প্রাণ হারান। আবদুল হালিমকেও পিঠে গুলি করা হয়, কিন্তু অলৌকিকভাবে গুলি তার মেরুদণ্ডের পাশ ঘেঁষে চামড়া ভেদ করে বেরিয়ে যায়, ফলে অল্পের জন্য তিনি প্রাণে বেঁচে যান। এই বইয়ে মুক্তিযুদ্ধকালীন সেই দুঃসহ স্মৃতিগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে।