চক্রবিধির একদম পিছনের ফ্ল্যাপে লেখাটা পড়ে বইটার প্রতি আগ্রহ হয়। লেখাটা আগ্রহ জন্মাবার মতোই। আবীর আর ঐশীর দ্বিচক্রযানে শুরু হওয়া এক প্রেমের গল্প। প্রেমের উপন্যাস মনে করেই পড়া শুরু। কিন্তু বইটার শুরু একদম পারিবারিক আবেশে। আবীরের জন্মদিন। কী অদ্ভুত একটা ছেলে আবীর। জন্মদিনে তার দিনটা কাটে সুন্দর কিছু ছেলে-মেয়ে নিয়ে। তাদের নিয়ে মেতে থাকে। বাড়িতে তার মা রেহানা, ভাই জাহিদ, ভাবী নার্গিস, ছোট বোন—সবাই মিলে নানা দ্বন্দ্ব, টানাপড়েনের সংসার। তাও কী স্নিগ্ধ একটা মায়া ভাই-বোন-মায়ের সম্পর্কের মাঝে। একই সাথে রূঢ় বাস্তবতার সাংসারিক কলহ... ফ্ল্যাপের লেখার জন্যই হয়তো ঐশীর খোঁজ ছিল প্রতি মুহূর্তে, ঐশীর আগেই দেখা মেলে শম্পার। ছটফটে দুরন্ত সদ্য তরুণী। তখন মনে হয়নি, এই চরিত্রটি একটি প্রধান নিয়ামক হয়ে পড়বে চক্রবিধির চক্রে। ঐশীর দেখা মিলে। দ্রুত কিন্তু দৃপ্ত অস্তিত্বে উপন্যাসের সব আলো নিজের দিকে টেনে নেয় এই চরিত্রটি। পরীক্ষায় দেরি হয়ে যাচ্ছিলো, সেরকম এক উদ্বেগের সময়ে আবীরের সাথে পরিচয় ঐশীর। আবীর তখন পারিবারিক ব্যবসা-টিউশন এসবের পোড় খেয়ে রাইড শেয়ারিংয়ের কাজ করে। শুরু হয় তাদের চক্রযানের মাধ্যমে, চক্রবিধি... উপন্যাসটি এগিয়েছে সাবলীল গতিতে। সমাজ বাস্তবতা, পারিবারিক আবহ, অসম প্রেম, এক পাক্ষিক প্রেম—সব মিলিয়ে একটি চমৎকার ব্যালেন্স তৈরি করে পরিমিত গতিতে ছুটে যাওয়া উপন্যাস চক্রবিধি। উপন্যাসটি আপনাকে অনেকের দৃষ্টিতে একটি ঘটনা দেখতে শেখাবে। চক্রবিধির ঘটনা যদি আমি আপনাকে বলি, শম্পা-নার্গিস এদের প্রতি রাগ হবে আপনার, কিন্তু উপন্যাস পড়লে এদের প্রতি রাগটা ঠিক আসবে না। ঠিক-ভুল বা একপাক্ষিকতার একটু বাইরে আপনাকে ভাবাবেই উপন্যাসটি। উপন্যাসের শেষে ঘটণাপ্রবাহ এবং আপনার পড়ার গত দুইই ত্বরান্বিত হবে... আর শেষটা... চক্রবিধির সাথে পথটা অতিক্রম করেই আসুন... আবীর-ঐশী পথের ধারে আসন পেতে অপেক্ষা করছে। এবং কিছু সময় পিছু চাইতে হয়... এই উপন্যাসের চরিত্রগুলোকে পিছু চাইতে হয়েছে। সেই পিছু তাকানোয় চোখে পড়েছে নিজেদের অনেক ভুল এবং ভ্রান্তি... সেগুলো শোধরানোর সময় কী হয় তাদের? বা... আমাদের??