শাইখ খালিদ আর রাশিদ—বিগত কয়েক দশকের দাওয়াহর ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় নাম। তাঁর দরদভরা আওয়াজ, আবেগাপ্লুত অভিব্যক্তি আর ইমানদীপ্ত আহ্বান নতুন উপলব্ধির ঝড় তুলত তরুণদের হৃদয়ে। দ্বীনের পথে প্রত্যাবর্তনের এক তীব্র আহ্বান ধ্বনিত হতো তাদের অনুভবে। তাঁর ইমান জাগানিয়া ভাষণ কত আরব যুবককে আলোকিত জীবনের সন্ধান দিয়েছে, কত বিভ্রান্ত পথহারাকে আলোর দিশা দিয়েছে, তার কোনো লেখাজোখা নেই। তাঁর আবেগকম্পিত কণ্ঠস্বর শ্রোতাদের মুহূর্তেই নিয়ে যেত উপলব্ধির দুনিয়ায়—নাড়া দিত হৃদয়ের মর্মমূল ধরে। এ যেন কেবল উচ্চারণ নয়, মূর্তিমান অনুভূতির এক অবিরল বর্ষণ। আর এমনটি হবেই না বা কেন? তিনি নিজেও একসময় আঁধার ঘরের বাসিন্দা ছিলেন। অন্ধকার জীবনের কষ্ট তিনি বুঝতেন। তাই যখন তিনি রবের করুণা লাভ করলেন, হিদায়াতের আলোয় উদ্ভাসিত হলেন, তখন তিনি তাঁর মুমিন ভাইদের ঊষর হৃদয়ে হিদায়তের সেই জান্নাতি সুধা ঢেলে দিতে ব্রতী হলেন। শায়েরে ইসলাম আল্লামা ইকবাল কত সুন্দরই বলেছেন: জু বাত দিল সে নিকলতি হ্যায় আসর রাখতি হ্যায়। আরব তরুণদের মাঝে শাইখের অনবদ্য দাওয়াহ কর্মসূচি আর অসাধারণ জনপ্রিয়তা তাঁকে আরব শাসকদের চক্ষুশূল করে তোলে। ২০০৫ সালে ডেনমার্কের একটি পত্রিকা প্রিয়নবি স. এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করলে তিনি গর্জে ওঠেন। নবিপ্রেমে উদ্বেলিত শাইখের কণ্ঠে ধ্বনিত হয় কালজয়ী এক ভাষণ—ইয়া উম্মাতা মুহাম্মদ। ফুঁসে ওঠে আরব দুনিয়া। এই অপরাধে সৌদি জালিম শাসকগোষ্ঠী তাকে গ্রেফতার করে। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তিনি সৌদি আরবের জিন্দানখানায় অবর্ণনীয় দুঃখ-কষ্টে দিনাতিপাত করে সংগ্রহ করছেন অনন্ত জীবনের সোনালি পাথেয়। আল্লাহ তাআলা আমাদের প্রিয় শাইখের মুক্তি ত্বরান্বিত করুন।