নতুন বউয়ের মুখে সালাম শোনে রাগে দিলারা জামান মুখের ভাবভঙ্গি পালটে ফেলে বললেন, "মুরব্বিদের কীভাবে সালাম করতে হয়, জানো না?" হিয়া প্রচণ্ড অস্বস্তি ও অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে গেল। সবসময় মুরব্বিদের মুখে সালাম দিয়ে অভ্যস্ত সে। কখনও কেউ তাকে এভাবে বলেনি। আর পা ছুঁয়ে সালাম করাটা তার নিজের পছন্দ নয়। কিন্তু এই মুহূর্তে এমন একটা কথা নিয়ে কোনো ধরনের দ্বন্দ্ব ও তর্কে যেতে চাইল না সে। তাই ঝটপট খুব ভদ্রতার সাথে শাশুড়িকে কদমবুসি করে ফেলল। দিলারা জামান ফের মুখ কুঁচকে বললেন, "হয়েছে থাক! এত আদিখ্যেতা দেখাতে হবে না।" অর্ণব জানে মা এমনই! তবুও নতুন সম্পর্ক ও নতুন ঘর সম্পর্কে একটা মেয়েকে শুরুতেই এমন কঠিন অভিজ্ঞতা দিতে হবে কেন? সে মায়ের কাণ্ডে যথেষ্ট বিরক্ত হয়ে বলল, "তুমি কি ভালো কিছু বলতে পারো না, আম্মা? সবসময় এমন খিটমিট করো কেন?" দিলারা জামান ছেলের কথা শোনে নাটুকে কান্না জুড়ে দিয়ে বললেন, "বাড়ি থেকে সরেছিস কতদিন হলো? এর মধ্যে আম্মাকে পর করে দিলি, বাবলা? এখন আর আমার কোনো কথা তোর ভালো লাগে না?" অর্ণব কপালে হাত চেপে ধরে বলল, "উফফ, আম্মা। একটু রেহাই দাও।" অরূপ মায়ের এই আচরণে বিরক্ত, রাগ ও অসন্তুষ্ট হলেও, হিয়ার সামনে মাকে কঠিন করে দুটো কথা বলতে পারল না। শুধু বলল, "আম্মা, উনি এই ঘরের বড়ো বউ। ঘরের বউকে সম্মানের সাথে ঘরে নিয়ে যাওয়া উচিত না? আর কতক্ষণ বাইরে দাঁড় করিয়ে রাখবে?" এরপর চোখ দিকে মাকে শাসিয়ে, নিজের স্ত্রী মুনীরাকে বলল, "ফ্রিজ থেকে মিষ্টি নিয়ে এসে বধূবরণ করো। যাও।" মুনীরা হাসিমুখে ঘরে এসে মিষ্টি ও শরবত হাতে নিয়ে বাইরের দরজায় এসে, চামচে সামান্য মিষ্টি নিয়ে, হিয়ার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, "আপনার আগমনে এই ঘরে আনন্দ ফিরে আসুক।" দিলারা জামান আবার রেগে গেলেন। ঘরে যেন আনন্দ নেই। সবাই-ই যেন দুঃখ ও যন্ত্রণা নিয়ে দিন কাটাচ্ছে। ছোটো বউ জীবনে ভালো হবে না। তিনি মুখ ভেংচিয়ে সেখান থেকে চলে গেলে হিয়া অসহায় চোখে অর্ণবকে দেখল। মুখের মিষ্টি মুখেই আটকে যাচ্ছে তার, ভেতরে যাচ্ছে না। সে যে ভীষণ অনাহুত একজন, সেটা উপলব্ধি করেই চোখ জ্বালা শুরু হলো। একই গ্লাসের শরবতে দু'জনের চুমুক দেওয়া শেষ হলে, মুনীরা বলল, "ভেতরে আসুন, ভাবী। এখন থেকে আপনিও এই ঘরের একজন।"
হিয়া, অর্ণব, মিঠির গল্প!
Read all reviews on the Boitoi app