Published
July 3, 2025
Language
বাংলা
Pages
251
Published by
বইটইরোদেলার মৃত্যুর পাঁচ বছর পর -------------------------------------------- ক্যালেন্ডার হিসেবে এখন উইন্টার চলছে, সময় সকাল নয়টা পঁইত্রিশ। এখান থেকে চেস্টার ইউনিভার্সিটি হাঁটা পথ। এত বড় ইউনিভার্সিটিতে কোথায় কী তা সুফিয়ানের বুঝতে সমস্যা হবে, তাই সেখানে পড়াশোনা করে এমন একজনের ফোন নম্বরও জোগাড় করে নিয়েছে আসার পরপরই। কিছু ইনফরমেশন ক্রসম্যাচ করতে ওর এতদূর আসা। অনেক চেষ্টায় ঢাকার এক এজেন্সি ধরে বারো লক্ষ টাকার কন্ট্রাকে ছয় মাসের ভিজিট ভিসা নিয়েছে ও। পরিচিত সবাই এটাকে বলেছে পাগলামি। কিন্তু ওই জানে এসব পাগলামি কি-না, পাগল তো ও হয়েই আছে, নতুন করে হওয়ার ভয় তাই ওর আর নেই। ওর আর পিছুটান কী? অবশেষে সেখানে পৌঁছে কল করে সুমনাকে, সে এসে সুফিয়ানকে রিসিভ করে গেইট থেকে। এরপর সুমনা ওকে বরাবরের মতো সাইন্স ফ্যাকাল্টির কাছে নিয়ে যায়। সেখানে সুফিয়ানকে রেখে ভিতরে যায় সুমনা। সুফিয়ান যার খোঁজে এসেছে সে এখানকার এলামনেস, কাজ করে এখানকার এক প্রফেসরের রিসার্চ এসিস্ট্যান্ট হিসেবে। তার আজ মর্নিং শিফটে কাজ চলছে, শেষ হবে একটায়। সুফিয়ান সেই ফ্যাকাল্টির বাইরে দাঁড়িয়ে আছে লক করা ফোনের দিকে চেয়ে। অবশেষে একটা ম্যাসেজ টোন কানে আসে ওর, লক স্ক্রিন না খুলতেই ডিসপ্লেতে ভেসে থাকতে দেখে ম্যাসেজটি- "মাত্র বের হয়েছে, সিঁড়ি দিয়ে নামতে এক মিনিটের মতো লাগবে।" ক্লাস পিরিয়ড শেষ হওয়ায় অনেকেই বের হচ্ছে একসাথে, অনেকে ভিতরেও যাচ্ছে। মোটামুটি ক্রাউডেড এরিয়া। তবুও সুফিয়ান জানে যাকে ও খুঁজছে তাকে পৃথিবী সুদ্ধ মানুষের মধ্যে চিনে খুঁজে বের করতে পারবে। রোদ নেই তবুও চোখে সানগ্লাস সুফিয়ানের। নিজেকে আড়াল করতে বোধহয়। সুমনাকে দেখলো সুফিয়ান, কিন্তু সে? কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজির পর অবশেষে সুফিয়ান তাকে দেখলো, দুনিয়াটা যেন স্তব্ধ হয়ে গেছে, চারপাশের সব কিছু থমকে আছে, শুধু চলছে ও! কালো রঙের পোশাকে শীত নিবারণের জন্য ছাই রাঙা ওভারকোট জড়িয়েছে শরীরে, গলায় ঝুলছে বারবেরি প্রিন্টের একটা লম্বা স্কার্ফ, ব্যাগ হাতে হন্তদন্ত হয়ে ছুটছে সে। যেন গাড়ি কিংবা ট্রেন ধরবার তাড়া আছে ওর। যদিও এখনকার সবাই এমনি ব্যস্ত ভঙ্গিতে হাঁটাচলা করে। সুফিয়ানের জীবনের সাড়ে পাঁচ বছর কেটে গেছে অথচ তার জীবন ঘড়ি যেন উল্টো ঘুরেছে এতদিন। বয়স অনেক কমে গেছে যেন। অনেক হ্যাংলা হয়ে গেছে ও, তাই আগের চেয়ে লম্বা লাগছে ওকে, মেদহীন মুখটায় চিবুকের টোল আরো বেশি করে স্পষ্ট লাগছে। পড়াশোনা, জ্ঞান অর্জন একটা সূক্ষ্ম গাম্ভীর্য এঁকে দিয়েছে ওর মুখশ্রীতে। হঠাৎ সুফিয়ানের চোখ ভিজে উঠলো কিনা বুঝলো না, মুখ ঘুরিয়ে পকেটের রুমাল বের করে চোখ মুছলো ও। ততক্ষণে সে সুফিয়ানকে অতিক্রম করে তার জন্য অপেক্ষমাণ গাড়ির দিকে পৌঁছে গেছে। সুফিয়ান তার সামনে গিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করে- "কেমন আছো রোদেলা?" তিনি যেন চমকে উঠলেন সুফিয়ানের কথা শুনে। গাড়ির অর্ধ খোলা দরজা আগলে ধরে তিনি পেছন ফিরে তাকিয়ে এক মুহূর্ত যেন থমকে দাঁড়ায়, ওকে দেখে হঠাৎ হকচকিয়ে যায়, যেন দিনের বেলায় ভূত দেখলেন। তার মুখমুখে বিরক্তির ছাপ টেনে এনে স্পষ্ট ইংরেজিতে বললেন- "কে আপনি...? আর কাকে রোদেলা বলছেন..?"