"আপনি কী বলতে চাইছেন, বলুন তো? আপনার মেয়ের জন্য অন্য কোনো মা পেলেন না? আমাকেই আপনার বিয়ে করতে হলো।" "ওকে তো আপনি বাঁচিয়েছেন। ও আপনাকেই ওর মা হিসেবে চায়।" "কিন্তু আমি চাই না। আপনার মেয়েকে আমি চাইইইই না। বুঝতে পেরেছেন?" দীর্ঘশ্বাস ফেলল নায়েল। ছোট্ট করে বলল--- "এছাড়া আপনার কাছে আর কোনো উপায় নেই। আপনাকে এই বাড়িতেই থাকতে হবে। আমার মেয়ের মা হয়েই থাকতে হবে।" রাগে থরথর করছে অর্হিতার শরীর। লোকটা কত বড় অসভ্য! চিৎকার করে উঠে অর্হিতা। "আমি আপনার মেয়েকে বাঁচিয়েছি। সেই খুশিতে আপনি আমাকে মেরে ফেলতে চাইছেন?" নায়েল ভ্রূকুঞ্চন করে অবাক গলায় বলল--- "আপনি ভুল ভাবছেন। আমি আপনাকে জোর করতে চাইনি। মেরে ফেলব কেন? বরঞ্চ বাঁচিয়েছি। আপনার ভাই বলল, আপনি বাইরের ক্রান্ট্রিতে গিয়ে হায়ার স্টাডি করতে চান! আমি আপনার জন্য সব ব্যবস্থা করব। শুধু তার বিনিময়ে আমার মেয়েকে আপন করে নেবেন। দ্যাটস ইট।" রাগে হতবিহ্বল অর্হিতা বিছানার পাশের টেবিল থেকে টেবিল ল্যাম্পশেডটা নিয়ে ছুড়ে মারে নায়েলের দিকে। তা সোজা গিয়ে লাগে নায়েলের কপালে। কেটে যায় অনেকটা জায়গা। অর্হিতার রাগ কমলো না। মায়াও হলো না লোকটার জন্য। ভাবে কী নিজেকে? জোর করে বিয়ে করে একটা বাচ্চা ধরিয়ে দিলেই হলো! না। এমনিতেও ও বাড়িতে তার কোনো সম্মান নেই। এখানেও যদি তাই হয়, তাহলে সে লড়বে। নিজের জন্যই লড়বে। অন্যের বাচ্চাকে সে কেন মাতৃস্নেহ দেবে? কপালে হাত দিয়ে উজ্জ্বল চোখে চেয়ে আছে নায়েল। মেয়েটার এই ঝড়ো রাগের জন্যই এত কাঠখড় পুড়িয়ে তাকে বিয়ে করেছে সে। তার প্রতি তিক্ততা এই সম্পর্কের মাঝে দেয়াল তুললেও তার মেয়েকে দেবে আশ্রয়। পিউলীর জীবন সংকটে এই মেয়ে-ই হবে তার হাতিয়ার। যে পিউলীকে রক্ষা করবে ওই অদৃশ্য শত্রুর হাত থেকে। দশ মাস দশ দিন একটা ভ্রুণকে যেমন মা তার জঠরে লালন করে পৃথিবীর ভয়াল আগ্রাসন থেকে রক্ষা করে, ঠিক তেমনভাবে অর্হিতাও তার পিউলীকে রক্ষা করবে সেই নামহীন ভয়ংকর প্রহেলিকা থেকে। যা এখনো বলয় হয়ে ঘিরে রেখেছে তার মেয়েকে। অর্হিতার এই রাগি, জেদি মনে তার মেয়ের জন্য জায়গা করে তুলতে হবে।
পড়ে শেষ করার পর রিভিউ লেখা বা কিছু বলার মতো মানসিক অবস্থা ছিল না। কেমন স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। গল্প আর বাস্তব অভিজ্ঞতা মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। নিজ জঠরে ধারন না করেও মা হওয়া যায় ।যেমন পেরেছে অর্হিতা। তবে, সমাজে অর্হিতাদের সংখ্যাটা কম । সংখ্যাটা কম হলেও শূন্য নয় । নায়েল,সে কি অর্হিতার চেয়ে কোন অংশে কম ? পিউ তার ঔরসজাত না হলেও , সে হয়ে উঠেছে বাবা । সুহাসের প্রতিশোধ স্পৃহা হার মেনেছে ভালোবাসার কাছে। সে হেরে গেছে পিউ এর নিষ্পাপ ভালোবাসার কাছে, হৃতির ভালোবাসার কাছে এবং পিউ এর জন্য নায়েল ও অর্হিতার ভালোবাসার কাছে। হার্টবিট আসেনি। দুই মাসের জন্য এক মা তাকে বহন করেছে। হার্টবিট না থাকলেও মায়ের হার্টে তার স্থান পাকাপোক্ত হয়ে গেছে । সে নেই কিন্তু তার অস্তিত্ব থেকে গেলে। কোন চিহ্ন নেই তার কিন্তু মায়ের শরীরে ছেড়ে গেল কিছু ক্ষত। কিছু ক্ষত শরীরে তো কিছু ক্ষত মনে। শরীরের ক্ষত হয়তো কখনো মিলিয়ে যাবে কিন্তু মনের, এক মা সেই ক্ষত আজীবন বহন করবে। অর্হিতার এই ক্ষত অপূরণীয়। ভুক্তভোগী ছাড়া এই বেদনা অনুভব করা যায় কি ! জঠরকে নতুনভাবে পড়তে পারার অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা আমার পক্ষে অসম্ভব। আপনি বরাবরই সুন্দর লেখেন । শব্দ চয়ন , অনুভূতির প্রকাশ,কাহিনীর বর্ণনা সব কিছুই অসাধারণ। ভালোবাসা রইলো। ❤️❤️❤️❤️❤️❤️
Read all reviews on the Boitoi app
অনেক সুন্দর হয়েছে।আহ্ নায়েল,পিউরীকে কি ভালোবাসে।ওর এই ভালোবসাায় একদম মুগ্ধ করেছে!ঔরসজাত না হয়েও ভালোবাসা যায় একজন ভালো মনের আর নির্স্বার্থ মানুষই পারে যা নায়েল দেখিয়েছে।আবার অর্হিতা মা না হয়েও মা হয়েছে।এত সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলেছ লেখিকা আপু যা অতুলনীয়🥰। ভালোবাসা দিয়ে পশু তুল্য মানুষকেও মানুষে পরিণত যায়। যা সুহাসকে দেখে বুঝা যায়।