বিশাল বাংলার অজস্র ঘটনাবলির কিছুই দেখিনি। শিশু ছিলাম। দু-একটি ঘটনা শুধু অস্পষ্ট ভাসে। তবে গোলা ছুটে যাওয়ার পর বারুদের গন্ধ আর ধোঁয়া থেকে যায় বেশ খানিক সময়। আমরা সেই সময়টা দেখেছি। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ইন্দ্রীয়গুলো বারুদের গন্ধ, রক্তে ভেজা ঘাস, মানুষের কান্না এসব স্পষ্ট করে তুলেছে। ফলে মুক্তিযুদ্ধ না দেখেও দেখেছি বলে মনে হয়। তবে ব্যক্তিগত শিক্ষা, বাস্তবতা বোঝার খানিকটা সহজাত শক্তি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে অতিরঞ্জন, অতি আবেগ, অতিকথন যেমন বুঝতে পেরেছি, তেমনি আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যে রক্তক্ষয়, যে মর্মভেদি শোকাবহ ঘটনাবলির জন্ম দিয়েছে পশুর মতো একশ্রেণির মানুষ-সেটাও অনেকটাই উপলব্ধি করতে পেরেছি বলে বিশ্বাস। মুক্তযুদ্ধ না দেখলেও খুব একটা হীনম্মন্যতা নেই। লেখার অধিকার জন্মে যদি উপলব্ধির উপর বিশ্বাস রাখা যায়। মাজেদের কাহিনী একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা। যে কাহিনীর অর্ধাংশ দেখেছি নিজের চোখে, বাকিটা সমাজ-পারিপার্শ্বিকতা থেকে গ্রহণ করেছি। মাজেদের নামটি সামান্য পরিবর্তন করা হয়েছে। স্বাধীনতালাভের পর মাজেদকে দেখেছি, মাজেদদেরকে দেখেছি। দেখেছি একাধিক সিকান্দার ও আতাহার চরিত্র। এসব ঘটনাবলি ছাপার অক্ষরে রেখে যাওয়ার লোভ ছিল। ভবিষ্যতে আরো লেখার ইচ্ছা আছে। মুক্তিযুদ্ধের বহুরকমের ঘটনাবলির ক্যানভাস এতটাই বিশাল যে নির্দিষ্ট ছকে ফেলে হিসাব করার সুযোগ নেই। একদিকে যখন পাকিস্তানের সেনাবাহিনী ও তাদের এদেশীয় সহযোগী বনাম মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় বাহিনীর তুমুল লড়াই চলছে, ঠিক সেই সময় যুদ্ধের সুযোগে নিস্তব্ধ জঙ্গলে মৃতপ্রায় কিশোরীর উপর পাশবিক কামনা মেটানো─এ সব কিছুই মুক্তিযুদ্ধের অংশ। শুধু বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধই নয়, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ অথবা ভিয়েতনাম যুদ্ধ বৈচিত্র্যময় পৃথিবীর দেখা না দেখা তাবত যুদ্ধই ঘটনায় পরিপূর্ণ, যার প্রকৃত দৃশ্য সঠিকভাবে উঠে আসা প্রায় অসম্ভব।