জয়নাল যখন মাত্র সাত বছরের, এক আঁধার অমাবস্যার রাতে শীতলক্ষ্যা নদীতে নৌকা ডুবে চিরবিদায় নেয় তার বাবা-মা। সেই থেকেই নদীর পাড়ের খেয়াঘাট হয়ে ওঠে তার একমাত্র আশ্রয়স্থল। সময়ের ঢেউয়ে ভেসে যেতে যেতে জয়নালের মনে জন্ম নেয় এক গভীর উপলব্ধি—মানুষের জীবনও যেন নদীর মতোই, নিরন্তর চলমান। তাকে থামাতে গেলে ঘটে ধ্বংস। তবুও কখনো কখনো জীবন থেমে যায়—মানুষের হিংসা, লোভ, আর নিষ্ঠুরতার কাছে হার মেনে। শীতলক্ষ্যার তীর ঘেঁষে গড়ে ওঠা শান্ত বসতিগুলোও বিষিয়ে ওঠে সেই অমানবিকতায়। দুটি কোমল হৃদয়ের নিঃস্বার্থ প্রেম সমাজের নিষ্ঠুর খাঁচায় বন্দি হয়ে এক মর্মান্তিক পরিণতির দিকে ধাবিত হয়। মৃত প্রেমিকের দেহ হয় হিংস্র জন্তুর আহার, আর আরেকজন নিজের প্রাণ দিয়ে মুক্তি খুঁজতে চায় এই পাপাচারগ্রস্ত সমাজ থেকে। কিন্তু সত্যিকারের মুক্তি কি মৃত্যুর মাঝে লুকানো? জয়নাল, যে বড় হয়েছে একাকীত্ব আর বঞ্চনার মধ্যে, সে প্রতিবাদ করে। সে বিশ্বাস করতে শেখে—মৃত্যু নয়, মানুষের প্রতি ভালোবাসা, সহানুভূতি আর ক্ষমাই পারে মানবজীবনকে অর্থপূর্ণ করতে। নিস্তেজ সমাজের মুখে সে এক প্রশ্ন তুলে ধরে—আমরা কি সত্যিই বেঁচে আছি, নাকি কেবলই বয়ে চলছি সময়ের স্রোতে, অনুভূতিহীন পাথরের মতো?