সূর্যটি অনেকক্ষণ আগে ডুবে গেছে। সন্ধ্যা পেরিয়ে রাতের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে চাইছে। টিপটিপ করে বৃষ্টি পড়ছে, এবং টিনের চালে মৃদু রিমঝিম শব্দ তুলছে। চারপাশে অচেনা ফুলের মিষ্টি গন্ধ এবং ভেজা মাটির সোঁদা গন্ধ রয়েছে। কিছুক্ষণ আগে ঝড়ো বাতাস বইছিল। মাস্টার বাড়ির ছোট ঘরটায় আড্ডার জন্য দশজন লোক জমা হয়েছে। প্রতি সন্ধ্যায়ই হয়, বৃষ্টি থাকুক বা না থাকুক। এই আড্ডার নেশাটা লোকগুলোর কাছে আফিমের মতো। যখনকার কথা বলছি, তখন বাঙালির সন্ধ্যাগুলো রেডিও টিভির দখলে যায়নি। দশ বিশটা গ্রামে হয়তো এক আধটা বাড়িতে ভাঙা রেডিও বা সাদা-কালো টিভি ছিল। আড্ডার মধ্যমণি হলেন বিধু বাবু, বয়স প্রায় ষাট। শরীরের বাঁধুনি পোক্ত এবং কোথাও বাড়তি মেদ নেই। বিধু বাবু উপস্থিত মানুষগুলোর দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিলেন। তারপর চোখ বন্ধ করে নাকে গুঁজে দিলেন এক টিপ নস্যি। কিছুক্ষণ পরে গলা খাঁকাড়ি দিয়ে বললেন, “বুঝলে হে, অভিজ্ঞতার ঝুলি তো আমার কম নয়।”