কাঁচের গ্লাস দিয়ে নিচের দৃশ্য স্পষ্ট চোখে পড়ে। মাফরুজের মুখে একরাশ ক্রোধ। কিসের জন্য, সে জানে না? এই মেয়েটা কে নিয়ে তার অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছিল। তার স্পষ্ট ব্যাখ্যা তার কাছে নেই। তবে এই যখন দেখল, অন্য পুরুষ উদ্ভ্রান্তের মতো এসে মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে কী সব বিষয় বলছিল, তখন মাফরুজের বুকের মধ্যিখানে এক ব্যথা, এক অসুখ গড়ে উঠছিল। সে আপনাআপনি হাত রাখল নিজের বুকের উপর। 'অসুখ, এটা কীসের অসুখ? কোনো উপশম পাওয়া যাবে এই অসুখের? এই ব্যথা কী ঐ মেয়ের জন্য, নাকি কোনো দায়সারা বন্ধনে বেঁধে থাকার জন্য সৃষ্ট অসুখ?' মাফরুজের ভাবনার মাঝেই তার কেবিনে কেউ নক করে। সে চোখ ফিরিয়ে দেখল, মেয়েটা এসেছে। কী যেনো নাম? ভেবে ন্যায় মনে পড়ে, তাকে গার্ড 'আফনান' ডেকে ছিল। চেহারার রঙ পাল্টে যায় তার। তখনকার এক পুরুষের সঙ্গে জড়িয়ে ধরার দৃশ্য তার বুকে আগুন জ্বালিয়ে মারছে। তখনকার সেই দৃশ্যে শোধ না উঠালে মাফরুজের বুকের জ্বালা মিটবে না। দাঁতে দাঁত চেপে 'কামিং' বলে উঠে। আফনান এসে তার হাতের মুঠোয় থাকা ফাইলের মুখ খুলে সিডিউল দেখল। মাফরুজের মুখ দর্শন করার কোনো ইচ্ছে নেই তার। ফলে মুখস্থ বিদ্যার ফলাফল প্রকাশ করার ধ্যানে একেক সিডিউল শুনিয়ে দিলো। সেই মুহূর্তে অন্য এক পিয়ন এসে স্যারের উদ্দেশ্যে ব্ল্যাক কফির মগ টেবিলে রেখে বেরিয়ে যায়। আফনান সিডিউল শুনিয়ে থেমে যায়। মাফরুজ জবাবহীন কফির মগ হাতে নিয়ে ফুঁ দিতে দিতে ধীরপায়ে আফনানের পাশ কেটে নিজের চেয়ারে বসার উদ্দেশ্যে এগোলো। আফনান কর্মচারী, তাই সে তার জায়গামত দাঁড়িয়ে আছে। মাফরুজকে পাশে আসতে দেখেই আফনানের বুকের মধ্যে দামামা বাজিয়ে হৃদপিণ্ডের তীব্রতা যেনো কেউ বাড়িয়ে দিলো। এই লোকের চাহনি, সুদর্শন চেহারায় ঘিরে থাকা অহংবোধ, হাঁটাচলার মধ্যে বিদেশি ভাব ফুটে উঠা নজরকাড়ার মতো। এই লোক দুর্ভাগ্যবোধে তার স্বামী। ভাবা যায়? দিনে যার সঙ্গে ঝগড়া লেগেছিল, যাকে সে অপমান করেছিল। সেই যে তার স্বামী বের হবে, ভাবেনি। এই লোকের পরিচয়ই যদি না জানত, তবেই সেও নিজেকে সামলে রাখতো। জানার পর থেকে তার প্রতিটা সময় কাটছে ভয়ে, শঙ্কায়, সংকোচে। সে পারছে না এই অফিস ছেড়ে চলে যেতে! হঠাৎ কাঁধ পুড়ে যাচ্ছে মতো অনুভব হলো। 'আহহহহ' কাঁধ চেপে আফনান আর্তনাদ করে উঠল। মাফরুজের কেবিনটা সাউন্ড প্রুফ করা হয়েছে কয়েক দিনের মধ্যে। আগে এই কেবিন ছিল তার বাবার। তখন সাউন্ড প্রুফ করার কোনো ইচ্ছে সেই ব্যক্তির ছিল না বলেই কেবিনে শোরগোলের শব্দ সহজে শোনা যেতো, আবার বাইরে থেকেও যেতো। বিধেয় নিজের বুদ্ধিতেই মাফরুজ এই ব্যবস্থা করেছে। আফনান করুণ চোখে কাঁধের দিকে তাকাল। তার পরণে সুতির কামিজ। কাঁধের উপর কামিজের ডিজাইনিং উড়না পিন করে আটকে রাখা। এর উপরেই মাফরুজের হাতের কফি পড়েছে। মাফরুজ অবাক হয়ে বলে, "ইশ, ইশরে বেশি পুড়েছে নাকি? আইম সরি, খেয়াল ছিল না। এমনে যে তোমার কাঁধে কফি পড়বে জানলে....." মাফরুজ হঠাৎ থেমে গেলো। তার মাথা খানিক ঝুঁকিয়ে আফনানের সেই কাঁধের কাছে নিয়ে গভীর ঘ্রাণ ভরা নিঃশ্বাস ফেলে বলে, "পুরো কফিই ঢেলে দিতাম।"
❤️❤️❤️❤️❤️❤️
Read all reviews on the Boitoi app