আদালতের কাঠের বেঞ্চে বসে আনন্দির মনে হচ্ছিল, তার জীবনটা যেন এক কোর্টরুম ড্রামায় রূপ নিয়েছে। জজ কাগজে খচখচ করে কিছু লিখলেন। কলমটা তুলে ফাইলে আরেকবার চোখ বুলিয়ে নিলেন। স্বভাবগত তিনি ভারী স্বরেই শোনালেন, "ডিভোর্সের আপিল গৃহীত হয়েছে। তবে চূড়ান্ত আদেশে পৌঁছাতে আমাদের আইন অনুযায়ী নব্বই দিনের কুলিং অফ পিরিয়ডে থাকতে হবে আপনাদের।" তিনি কাঁধ সোজা করে আবারো তাকালেন তাদের দিকে। “এই সময়ের মধ্যে আপনারা একসাথে থাকবেন। আইনি বিচ্ছেদে পৌঁছনোর আগে, সম্পর্কটাকে শেষ সুযোগ দেওয়া প্রয়োজন। এই সময় আপনাদের যদি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করার প্রয়োজন হয়, আপনারা করতে পারবেন।” আনন্দির হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসছিল। মেরুদণ্ড বেয়ে যেন একটা শীতল ছোঁয়া বয়ে গিয়েছে। পায়ের উপরে রাখা ব্যাগটা ধীরে ধীরে চাপ দিয়ে ধরল সে। আড়চোখে পাশে বসা উজানের দিকে তাকাল। বরাবরের মতোই শান্ত চাহনি তার, একবারও তাকায়নি তার দিকে। তার চোখ ছিল সামনের খালি প্রাচীরে। একদম শান্ত এবং স্বাভাবিক তার মুখভাব। যেন আজকের এই সিদ্ধান্ত সে আগেই মন থেকে নিয়ে ফেলেছে। উকিল তাদের দিকে কলম আর কাগজ এগিয়ে দিলেন। প্রথমে উজান সই করল স্বাভাবিক, নির্বিকার ভঙ্গিতে। তারপর কলমটা এগিয়ে দিল আনন্দির দিকে। একমুহূর্তের জন্য থমকে গেল আনন্দি। নামটা লিখতে গিয়েই আনন্দির হাত কাঁপতে লাগল। "আনন্দি মল্লিক", "মল্লিক" উপসর্গটা লেখার সময় হাত যেন চলতেই চাইল না। কিছুটা কাঁটার মতো গলায় বিঁধল, না চাইতেও কাঁপা কাঁপা হাতে লিখে ফেলল। হয়ত শেষবারের মতো। কেমন ছিল আনন্দি এবং উজানের নব্বই দিনের "কুলিং অফ পিরিয়ড"? এই নব্বই দিন কী তাদের সিদ্ধান্তে কোন পরিবর্তন এনেছিল? নাকি আলাদা হয়ে গিয়েছিল তাদের পথ?