অরষার একটা অদ্ভুত অভ্যাস আছে। প্রতিবার চলে যাবার ঠিক আগে ওর মসৃণ কপালজুড়ে শোভা পাওয়া টিপটা খুলে আমাকে দিয়ে যায়। আমার খুব হাসি পায়। লাল, নীল, কখনও গোলাপি। টিপ হাতে নিয়ে আমি কিছুক্ষণ নাড়াচাড়া করি। তারপর কখন কোথায় কীভাবে যেন হারিয়ে ফেলি। এই টিপ দেওয়ার হাস্যকর কাজটা ও সব সময়েই করে। আমিও বিপুল বিক্রমে সেইসব স্মৃতিমাখা টিপ হারিয়ে ফেলি। হাসি পেলেও অরষার এই অভ্যাসটা আমার ভালো লাগে। যতটা না টিপ পাওয়ার খুশিতে, তার অধিক টিপসহ এবং টিপবিহীন দ্বৈতরূপে ওকে দেখতে পাওয়ার আনন্দে। শেষ দিন, একটা কালো টিপ খুলে দিতে দিতে অরষা প্রশ্ন করেছিল, ‘আচ্ছা, আমি যে তোকে টিপগুলো দেই, তুই কী করিস?’ কী করি মানে? খুউব যত্ন করে তুলে রাখি। হান্ড্রেড পার্সেন্ট মিথ্যা কথাটা বলে আমি দাঁত কেলিয়ে হাসি। ‘তুই আমার টিপ কালেকটর! দারুণ তো! নেক্সট দেখার দিন নিয়ে আসিস, আমি দেখবো কতগুলো জমেছে।’ আমার মনে হলো কেউ আমাকে দশতলা বিল্ডিং থেকে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দিয়েছে। আহত গলায় মিনমিন করে বললাম, ‘জি, আচ্ছা।’ তখন ‘জি আচ্ছা’ বললেও এখন কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে। এমনিতে দেরি করে ফেলেছি, তার উপর যদি জানাতে পারে, তুলে রাখা দূরে থাক, একটা টিপও আমি খুঁজে পাচ্ছি না: ও ভীষণ কষ্ট পাবে। এক জীবনে মেয়েটাকে কেবল কষ্টই দিয়ে গেলাম।