"রাজসিংহ" বইটির ভূমিকা থেকে নেয়াঃ ‘রাজসিংহ’ ঐতিহাসিক উপন্যাস হিসাবে ‘দুর্গেশনন্দিনী’, ‘চন্দ্রশেখর’ বা ‘সীতারাম’ হইতে মূলত ভিন্ন। বঙ্কিমের অন্যান্য উপন্যাসে ইতিহাস কেবল একটা প্রতিবেশরচনার সহায়তা করিয়াছিল মাত্র; তাহাদের মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল ব্যক্তিগত জীবনের সমস্যার আলােচনা। ঐতিহাসিক বিপ্লব আসিয়া এই ব্যক্তিগত সমস্যাকে জটিলতর করিয়া তুলিয়াছে। সত্য, তথাপি মােটের উপর এই সমস্ত উপন্যাসে ইতিহাস অপ্রধান অংশ অধিকার করে। দুর্গেশনন্দিনী’তে ঐতিহাসিক পরিবেশ উপন্যাসের অনেক অংশ ব্যাপিয়া আছে, এবং নায়ক-নায়িকার ব্যক্তিগত জীবন ইতিহাসের ঘূর্ণাবর্তে পড়িয়া বিশেষভাবে বিক্ষুব্ধ ও আলােড়িত হইয়াছে সত্য, কিন্তু ততাপি ইহার প্রধান ব্যাপার ব্যক্তিগত জীবনের বাধা-বিঘ্ন-খণ্ডিত প্রণয় লইয়া। ‘চন্দ্রশেখর’ ও ‘সীতারাম’-এও ইতিহাসের এই দূরত্ব ও অপ্রধানতা সহজেই লক্ষিত হয়; শৈবলিনীর ও সীতারামের চরিত্র-বিশ্লেষণই ইহাদের মুখ্য উদ্দেশ্য। বিশেষত ‘সীতারাম’-এ সীতারামের অন্তর্দ্বন্দ্বই উপন্যাসের প্রধান বিষয়; তাহার রাজনৈতিক অধঃপতন নৈতিক অধঃপতনের পরােক্ষ ফল মাত্র বলিয়া বিবেচিত হইয়াছে। ‘রাজসিংহ’ ইহার সম্পূর্ণ বিপরীত; এখানে ইতিহাসই প্রধান বিষয়, ব্যক্তিগত জীবন-সমস্যা ইতিহাসের অনুবর্তন করিয়াছে মাত্র। উপন্যাসের মূল ব্যাপার হইতেছে রাজসিংহের সহিত আরংজেবের মহাযুদ্ধের বর্ণনা। তবে লেখক এই যুদ্ধের কেবল রাজনৈতিক ফলাফল নির্দেশ না করিয়া, ব্যক্তিগত জীবনের উপরে ইহার প্রভাব দেখাইতেছেন; এই যুদ্ধের মহাবর্তে পড়িয়া যে কয়েকটি প্রাণী পরস্পরের সন্নিহিত হইয়া পড়িয়াছে তাহাদের মানসিক সংঘর্ষ ও পরিবর্তনের চিত্রটিও উদ্ঘাটিত করিয়াছেন।
💝💝
Read all reviews on the Boitoi app
খুব সুন্দর