মৃদু রোমান্স, যৌথ পরিবারের মিথস্ক্রিয়া, কর্পোরেট কালচার, রাজনীতি আমাদের আসাপাশের নানা বিষয় নিয়ে ১১ টি ছোটগল্পের সংকলন কাচপাথরের রাত। ভদ্রলোকের সাথে আমার পরিচয় ফেসবুকে। ঠিক পরিচয় বলা যায় না। পরিচয় হয়েছিল তার লেখার সাথে। ফেসবুকের এক সাহিত্য গ্রুপে কামরান চৌধুরীর লেখা একটি ফিকশন সিরিজের একটা পর্ব পড়ে আমি স্রেফ আটকে গেলাম। পরের সপ্তাহখানেক সময়ের মাঝে আমি তাঁর আগের সব লেখা পড়ে ফেললাম। বেশিরভাগ গল্পই পাঠককে চুম্বকের মত আটকে রাখার মতো। তিনি মূলত ফেসবুকে লিখেন। নির্দিষ্ট করে বললে কেবল ফেসবুকের একটা সাহিত্য গ্রুপে লিখেন। কোনো স্বার্থ ছাড়াই সেই গ্রুপের প্রতি তার নিবেদন এবং বৃহৎ গ্রুপের বাকি নিয়মিত সদস্যদের সাথে সম্পর্ক দুর্দান্ত। আমি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালাম। তিনি গ্রহণ করলেন। এরপর ইনবক্সে প্রস্তাব দিলাম আমি প্রকাশক হিসেবে উনার বই প্রকাশ করতে চাই। উনি সবিনয়ে জানালেন সেই ফেসবুক গ্রুপে প্রকাশনা কার্যক্রম চলমান আছে। সেখানে তিনি কথা দিয়েছেন পরবর্তী মেলায় পাণ্ডুলিপি জমা দিবেন। যদি সেখানে মনোনীত না হয় তাহলে তিনি আমার সাথে কাজ করবেন। আমি একটু হতোদ্যম হলাম। কারণ ততদিনে থ্রিলার, সাসপেন্স ঘরানার ফিকশনে তাঁর লেখা এবং সেই ফেসবুক গ্রুপে তার জনপ্রিয়তা দুটোই আমি ফলো করে রীতিমতো তব্দা খেয়ে গেছি। আমি শুভকামনা জানিয়ে প্রস্তাব মুলতবি করলাম। দিন যায়, মাঝে মধ্যে হাই হ্যালো হয়। সৌজন্যমূলক বার্তা বিনিময় হয়। বৃটিশ সৌজন্যের প্রায় পুরোটাই দীর্ঘদিনের প্রবাস শেষে দেশে ফেরার সময় তিনি সাথে নিয়ে ফিরেছেন। বয়সে আমি ছোট হলেও ভদ্রলোক আমাকে বেশ সমীহ করে কথা বলেন। প্রকাশনা পেশায় যুঝতে থাকা আমার বেশ ভালোই লাগে সেই সমীহ। কিন্তু বই প্রকাশ করতে না পারার দুঃখ কি তাতে ঘুচে? ঘুচে না। অবশ্য এতদিনে আমি প্রত্যাখ্যান হজম করে করে মোটামুটি লোহালক্কড় হজম করার ক্ষমতা অর্জনের কাছাকাছি পৌঁছে গেছি। হঠাৎ সেই ফেসবুকে গ্রুপে গ্রুপ কেন্দ্রিক প্রকাশিতব্য বইয়ের তালিকা নিয়ে এডমিন পোস্ট দেখলাম। আমি খুঁজছি কত নম্বরে ভদ্রলোকের নাম। আরে, কিম আশ্চর্যম!!!! তার নাম নেই তালিকায়। আমি পুরো লিস্ট আবারো দেখলাম। নাহ আসলেই নেই। নিচে কমেন্ট, যাদের পাণ্ডুলিপি মনোনীত হয়েছে ভদ্রলোক উদার হৃদয়ে অভিবাদন জানিয়েছেন। আমি তখন উথালপাথাল খুশি। ভদ্রলোককে মেসেজ করলাম ‘ভাই শকুনের দোয়ায় মাঝে মধ্যে গরু মরে। বলেন পাণ্ডুলিপি কবে দিবেন? ভলিবলের কোর্টে বল এখন আপনার হাতে। আমাকে একটু ঠিকমতো বানিয়ে দেন। দেখেন কি একটা স্ম্যাশ করি।’ এরপরেও উনাকে রাজি করাতে আমাকে কিঞ্চিৎ কসরত করতে হয়েছে। সেটা মূলত আমাকে নিয়ে উনার টেনশনে। প্রকাশক হিসেবে আমি যদি বই ছাপিয়ে লস খাই সেই টেনশনে উনি জেরবার। ব্যাপারটা আমাকে বেশ স্পর্শ করে। বাংলাদেশের পাবলিশিং ইন্ডাস্ট্রির গতানুগতিক অভিযোগ; লেখকের অভিযোগ - প্রকাশক রয়ালটি দেয় না এবং প্রকাশকের সাফাই – বই বিক্রি হয়না এর বাইরে এসে আমাদের একটা হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে অল্প দিনে। এবং নিঃসন্দেহে তাতে আমার কৃতিত্ব অতি সামান্য। লেখক কামরান চৌধুরী'র প্রথম ছোটগল্পের বই, ‘কাচপাথরের রাত’ নিয়ে একটা দারুণ খবর কেবল, বইয়ের প্রচ্ছদ করেছেন ‘ধ্রুব এষ’ তা নয়। ধ্রুবদা এই লেখকের একটা গল্প পড়ে জানিয়েছেন তিনি প্রচ্ছদ করতে রাজি। সাথে ছোট কিন্তু খুব খুব প্রশান্তির একটা কমপ্লিমেন্ট জুড়ে দিয়েছেন। লেখককে বলেছেন “আপনার হবে ভাই। ভাল হয়েছে গল্প টা। আপনার লেখার হাত আছে। লিখে যান’। কামরান চৌধুরী, আপনি কি জানেন, শিল্পী কাউয়ুম চৌধুরী যিনি বাংলা বইয়ের প্রচ্ছদ ও অলংকরণের কিংবদন্তী তিনি হুমায়ূন আহমেদের প্রথম বই ‘নন্দিত নরকের প্রচ্ছদ করে কি বলেছিলেন? বইটি পড়ে কাইয়ুম চৌধুরী হুমায়ূন আহমেদকে প্রথমে বলেছিলেন, ‘আপনাকে দিয়ে হবে’। সাথে সাথেই আবার কিছু শব্দ পালটে বলেছিলেন ‘না না আপনাকে দিয়ে হয়েছে’। ধ্রুবদার কথা শুনে আমি সেই ইতিহাস মেলানোর দুঃসাহস করছি। আপনি করছেন কী? না করে থাকলে করেন।