'এই তো পায়ে চলার পথ। এসেছে বনের মধ্যে দিয়ে মাঠে, মাঠের মধ্যে দিয়ে নদীর ধারে, খেয়াঘাটের পাশে বটগাছতলায়। তার পরে ও পারের ভাঙা ঘাট থেকে বেঁকে চলে গেছে গ্রামের মধ্যে; তার পরে তিসির ক্ষেতের ধার দিয়ে, আমবাগানের ছায়া দিয়ে, পদ্মদিঘির পাড় দিয়ে রথতলার পাশ দিয়ে কোন গাঁয়ে গিয়ে পৌঁচেছে জানি নে। এই পথে কত মানুষ কেউ-বা আমার পাশ দিয়ে চলে গেছে, কেউ-বা সঙ্গ নিয়েছে, কাউকে-বা দূর থেকে দেখা গেল'। রবীন্দ্রনাথের মতো করে মন আরো বলতে চায়, এখন দিন গিয়েছে, অন্ধকার হয়ে আসে।...আজ ধূসর সন্ধ্যায় একবার পিছন ফিরে তাকালুম; দেখলুম এ পথটি বহুবিস্মৃত পদচিহ্নের পদাবলী, ভৈরবীর সুরে বাঁধা'।বহুবিস্মৃত পদচিহ্নের পদাবলীতে গড়ে ওঠা যে পথ বেয়ে আমি 'এক সোনার সিংহদ্বার থেকে আর এক সিংহদ্বারের' পানে এগিয়ে চলেছি, আজ ধূসর সন্ধ্যায় পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখতে পাই, এই পথে আমার পাশ দিয়ে চলে যাওয়া কত মানুষ, যারা আমার সঙ্গে ছিলেন, যাদের কাউকে দূর থেকে দেখেছি, তাদের কতজন আজ নেই। কালের যাত্রার পথে একে একে তারা হারিয়ে গেছেন। কে কবে কখন গেছেন সে হিসাবও আজ প্রায় বিস্মৃত। অথচ তাদের উপস্থিতি ছিল আমাদের জীবনে একদা কত উজ্জ্বল, কত মুখর। আমার এই বই এমন কিছু ব্যক্তিকেই স্মরণ করে লেখা। শুধুই স্মরণ, ব্যক্তিগতভাবে শুধু আমারই স্মরণ। যাদের কাছাকাছি ছিলাম, নানাভাবে যাদের দেখেছি, তাদেরকে নিয়ে এ আমার একান্ত স্মৃতিচারণ। চলার পথ থেকে হারিয়ে যাওয়া এই মানুষগুলিকে আমার আবেগ দিয়ে আমার অনুভূতি দিয়ে শুধু তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছি, এটি অবশ্যই তাদের জীবনীগ্রন্থ নয়। বইটির নাম নিয়ে যখন আমি সিদ্ধান্তহীনতায়, তখন কয়েকটি নামের মধ্য থেকে 'আছে দুঃখ আছে মৃত্যু' নামটি একবারেই পছন্দ করে দিলেন সহকর্মী সাংবাদিক হাসানুজ্জামান সাকী।