ফুলগুলো তাজউদ্দীনের চাদরে দিতে দিতে সে বলল, এই ফুল দিয়ে আপনি কী করবেন ? ফুল নিয়ে চাদরের প্রান্ত গুছিয়ে এক হাতে ধরে তিনি বললেন, বঙ্গবন্ধুকে দেব। আজ দশটায় তিনি আসবেন। আমি তাঁর জন্য ফুল কুড়োতে এসেছি। তুমি আমার আগে এসে সব দখল করে নিয়েছ। ছেলেটি সঙ্গে সঙ্গে বলল, তাহলে এই ফুল আপনাকে দেব না।—এই বলে সে ঘড়িটা ঘাসের ওপর ফেলে দিয়ে ফুলগুলো ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য শার্টের সামনের প্রান্ত কোঁচড়ের মতো করে বাড়িয়ে ধরল। তাজউদ্দীন বললেন, কেন দেবে না ? বঙ্গবন্ধুকে দিতে তোমার আপত্তি কিসে ? ছেলেটি সঙ্গে সঙ্গে তাড়াতাড়ি বলল, বঙ্গবন্ধুকে আমি নিজেই দেব ভাবছি। এবার তাজউদ্দীন অবাক হয়ে গেলেন। তিনি বললেন, সত্যি তুমি দেবে ? তাহলে তোমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছি। এই নাও। ছেলেটি বলল, ঠিক আছে আপনিই দিন তাহলে। ঘড়িটাও নিন। আমি তো তাঁর কাছেই যেতে পারব না! আপনি যেতে পারবেন। আপনিই দিন। আমি দেব ? তুমি বড়ো ভালো ছেলে। বঙ্গবন্ধু আজ দশটায় আসবেন। তুমি তাঁর সঙ্গে দেখা করতে চাও ? আমি প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন। তাজউদ্দীনের নাম শুনে ছেলেটি ভড়কে গেল। তারপর সঙ্গে সঙ্গে বলে উঠল, আপনি আমাদের প্রধানমন্ত্রী ? আপনি যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন ? আমি ঢাকা শহরে পাকিস্তানি সৈন্য দেখেছি। আমিও ওদের ঘৃণা করি। আপনি স্বাধীন বাংলার প্রধানমন্ত্রী ? সালাম আলেকুম। আমার নাম বকুল। তোমার কী মনে হচ্ছে ? সন্দেহ ? আমাকে বিশ্বাস করতে পারো। অমনি ছেলেটি খুশি হয়ে, কী করবে-না-করবে ভেবে পেল না। শুধু বলল, আপনিই দিন, আপনি দিলে ভালো হয়। বঙ্গবন্ধু খুশি হবেন।