গল্প কোনো খোয়াবের অলীক চিজ নয়। গল্প মানব মানচিত্রের ঘাস উপড়ানো রুক্ষ উঠোন থেকে উঠে আসে বহুমাত্রিক শোষণের মায়াজাল ছিন্ন করে, শব্দ আর অনুভবের নিখুঁত বয়নে। শাশ্বত নিপ্পন তীক্ষ্ণ তীরন্দাজের শৈলী সুষমায় বাংলার ধূসর প্রান্ত থেকে আখ্যান ও চরিত্র নিয়ে তৃতীয় গল্পগ্রন্থ ‘অশনির ছন্দ’ এনেছেন পাঠক-সমীপে। ধর্মান্ধতা কতো গভীরে শিকড় গেড়েছে এই একবিংশ শতাব্দীতে, প্রমাণ ‘একটি চড়ক মেলার গল্প’। বাস্তভিটা থেকে উচ্ছেদ- দেশভাগ, হিন্দু ও মুসলমানের মিলিত যন্ত্রণার স্বরগ্রাম ‘নো ম্যানস ল্যান্ড’- পাঠ শেষে মনে হয়, এই গল্প একশো পঞ্চাশ কোটি মানুষের আর্তি এখনো বিস্তার করে আছে কাঁটাতার উপড়ে ফেলে। জীবন প্রতিটি মানুষের কাছে পরমপ্রিয়। কিন্ত সেই জীবন বহন করাও কতোটা অশরীরী অমানবিক, ‘গোরখেকোর আজাব’ গল্পে গল্পকার তীব্র তুলনায় তুলে এনেছেন ধীবর দক্ষতায়। ‘অশনির ছন্দ’ গল্পগ্রন্থের প্রতিটি গল্প শাণিত প্রবাহের রক্ত পান করতে করতে পাঠকদের নিয়ে যাবে দূরের কোনো প্রস্তর কারাগারে কিন্ত মনন থেকে যাবে বাংলার অস্থি আর প্রবালের সঙ্গে। বইয়ে প্রতিটি গল্প অদ্বিতীয়, রক্ততাড়িত, বুভুক্ষু, চলিষ্ণু ও মাটি চিরে উঠে আসা ত্রিফলার মতো স্বয়ম্ভ। জয় হোক গল্পকার শাশ্বত নিপ্পনের।