উপন্যাস বলতে আমরা একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনগাঁথাই বুঝি। অধিকাংশ সামাজিক ও সমকালীন উপন্যাসের জীবনালেখ্য আমাদের পরিচিত দৈনন্দিন জীবনেরই জলছাপ মাত্র। এরকম অধিকাংশ লেখা পড়েই আমরা আমাদের চারপাশের দৃশ্যায়নই দেখি। তবুও নিত্য নতুন উপন্যাস লেখা হয়, আমরা কিনে পড়িও। কিন্তু কেন? নতুন কী পাই বা পেতে চাই? আসলে আমরা প্রতিটা উপন্যাসে আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি দেখতে চাই, আলাদাভাবে চিন্তা করার খোরাক পেতে চাই, আলাদা লেখনশৈলী উপভোগ করতে চাই, সর্বোপরি চেনা স্বাদের আড়ালেই নতুনত্বের গভীরতায় অবগাহন করতে চাই। কিন্তু সত্যিই কি সব উপন্যাসে আমরা তা পাই? সানজিদা হোসেইনের এটিই প্রথম প্রকাশিত বই 'গল্প... না কল্পনা ', তাও আবার আস্ত একটি উপন্যাস। তবে একদমই গতানুগতিক ধারায় তিনি উপন্যাসটি লেখেননি। উপন্যাসটির শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত কাহিনি বর্ণিত হয়েছে মেঘ ও টুকুন নামের মাত্র দুটি চরিত্রের কথোপকথনে। দুজনের কথাপকথনেই দুই পরিবারের ভাঙাগড়া, সম্পর্কের টানাপোড়েন, অনেকগুলি মানুষ সাথে নিয়ে দুটি মনের কাছে আসা, সবকিছুই ভীষণ অন্যরকম বাদানুবাদের মাধ্যমে পাঠকের কাছে প্রকাশিত হয়েছে। এর বাইরে যেটুকু লেখকের ভাষায় আমরা পেয়েছি, তা এ দুটি চরিত্রেরই জটিল ও সুক্ষ্ম মনোস্তাত্বিক বিশ্লেষণ। উপন্যাসটির সবচেয়ে চমকপ্রদ ও আকর্ষণীয় দিক হচ্ছে টুকুন ও মেঘের কথোপকথন। কথার পিঠে কথার মারপ্যাচে পাঠক উপন্যাসের গভীরে ডুবে গিয়ে আবার পরক্ষণেই স্রোতে ভাসতেও বাধ্য হবেন। আমি একজন বুভুক্ষু পাঠক হিসেবেই উপন্যাসটি গিলেছি। আমি জানি, প্রতিটি পাঠকই তাই করবেন। সানজিদা হোসেইনের 'গল্প... না কল্পনা' উপন্যাসটি পাঠের মাধ্যমে নতুনধারার লেখাকে স্বাগত জানাতে পেরে পাঠক আনন্দচিত্তে লেখকের পরবর্তী লেখার জন্য সতৃষ্ণ প্রতীক্ষা করবেন, এটাই আমার ঐকান্তিক কামনা।