সভ্যতার অগ্রযাত্রায় বড় বড় টার্নিং পয়েন্টগুলো ছিল যুদ্ধ। প্রথমদিকে প্রকৃতির সাথেই যুদ্ধ করে মানবসভ্যতা একেকটি বৈতরণী পেরিয়েছে। একটা সময় নিজেরাই জড়িয়েছে সমরযুদ্ধে। এসব যুদ্ধ সমৃদ্ধ করেছে, পাথেয় যুগিয়েছে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য। আপনার আজকের চারপাশের প্রতিটি জিনিসই এক সময়ের যুদ্ধের অবদান। ভাবতে অবাক লাগলেও এটাই সত্য। আর মানবেতিহাসের সমরকৌশল মানুষকে উপযুক্ত করেছে নতুন পৃথিবীর জন্য। মনস্তাত্ত্বিক সেইসব রণকৌশল না হলে আজকের পৃথিবী এমন হত না। আসুন প্রবেশ করি সেইসব রণাঙ্গনে…
যুদ্ধ শব্দটি মুখে নিতেই অবচেতন মনে ফুটে উঠে কিছু ধ্বংসাত্মক চিত্র কিংবা রক্তাক্ত দৃশ্য। যুদ্ধ কি তবে ধ্বংসলীলা রটানোর নামান্তর মাত্র? আসলে কি তাই? যুদ্ধের মাঝে উত্তম কিছু কি নাই? যুদ্ধের উপকারিতা কি? প্রশ্নগুলো গুরুত্বপূর্ণ। কেবল মাত্র শত্রুকে দমন করাই যুদ্ধের উদ্দেশ্য নয়, যুদ্ধের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে নানা প্রভূত কল্যাণ, উদ্ভাবনের এক অদম্য স্পৃহা, মানবকল্যাণের অশেষ পথ। আমাদের চারপাশে যেসব অসাধারণ আবিষ্কার হয়েছে প্রত্যেকটা আবিষ্কারের পেছনে রয়েছে যুদ্ধের ইতিহাস। শুনে অবাক হলেন? পুস্তিকাটি এমনই তথ্য দিচ্ছে। পুস্তিকাটি মোট দুইটি অধ্যায়ে বিভক্ত যথাক্রমে ”যুদ্ধই পৃথিবীর প্রাণ, যুদ্ধই সভ্যতার বিনির্মাণ” ও ”বদর যুদ্ধের সাইকোলজি” শিরোনামে। যুদ্ধই পৃথিবীর প্রাণ, যুদ্ধই সভ্যতার বিনির্মাণ: বর্তমান মুসলিম উম্মাহ জ্ঞান বিজ্ঞানে অনেক পিছিয়ে অথচ তাদের রয়েছে সোনালি যুগের স্বর্ণের ন্যায় চকচকে ও উজ্জ্বল কিছু ইতিহাস। এক কালে তারা জ্ঞান-বিজ্ঞানে রাজত্ব করত। কিন্তু তাদের বর্তমান অবস্থা এত করুণ কেন? এই প্রশ্নের উত্তর নানা দৃষ্টিকোণ থেকে দেওয়া গেলেও অন্যতম একটি উত্তর হলো-জিহাদ থেকে বিমুখ থাকা। অপরপক্ষে আজ ইহুদীরা জ্ঞান-বিজ্ঞানের দাপটিয়ে বেড়াচ্ছে কেন? কেননা তারা প্রতিনিয়ত ইসলামকে দমিয়ে রাখতে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। এমনটি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তারা সম্মুখীন হচ্ছে বিভিন্ন চাহিদার এবং চাহিদা সকল পূরণ করতে গিয়ে আবিষ্কার করে যাচ্ছে নতুন কিছু।যুদ্ধের দোহাই জ্ঞান-বিজ্ঞান-প্রযুক্তিতে তারা সমৃদ্ধ হয়ে চলেছে। এইতো স্রেফ বর্তমানের কথা শুনলাম এই অধ্যায়ে আপনি উসমানি খেলাফত থেকে শুরু করে তালেবান পর্যন্ত সময়ের সংক্ষিপ্ত রূপ রেখা দেখতে পাবেন এবং আপনি দেখতে পাবেন সভ্যতা আদি থেকে আজ পর্যন্ত, যারা শত্রুকে দমন করার জন্য সদা তৎপর ছিল তাদের কাছেই মাথানত করে হাজিরা দিয়েছে, দিয়েই চলছে। বদর যুদ্ধের সাইকোলজি: বদর যুদ্ধ ছিল ইসলামের সর্বপ্রথম জিহাদ। এই পর্বে বদর যুদ্ধে মুসলিম বাহিনীর মনস্তাত্ত্বিকতা নিয়ে একটি স্বচ্ছ ধারণা পাবেন আপনি। কেবলমাত্র অস্ত্রশস্ত্র আর হাজার হাজার সৈন্য থাকলে বিজয় লাভ হয় না, এর জন্য দরকার শক্তিশালী মনস্তাত্ত্বিকতা যা মুসলিম বাহিনীর নিকট উল্লেখযোগ্যভাবে ছিল। পাঠ শেষে: পুস্তিকাটি থেকে যেভাবে উপকৃত হলাম- ১. যুদ্ধকে নতুন ডাইমেনশনাল এরিয়া থেকে ভাবতে পারা; ২. উম্মাহর পতনের অন্যতম একটি কারণকে অনুধাবন করতে পারা; ৩. নবীজির (সা.) ওয়ার স্ট্যাটিজি নিয়ে কিঞ্চিৎ ধারণা পাওয়া; ৪. শত্রুরা আজ দুনিয়া দাপিয়ে বেড়াচ্ছে,কিন্তু কেন তা উপলব্ধি করতে পারা। (এসবই চূড়ান্ত নয়, পাঠক তার দৃষ্টিভঙ্গির উপর ভিত্তি করে আরো নানান ভাবে উপকৃত হতে পারেন) খুবই ছোট পুস্তিকা। আলোচনাও বেশ সংক্ষিপ্ত ও অপরিপূর্ণ। কিন্তু কথায় আছে ছোট মরিচের ঝাল বেশি এটিও তাই। এটি আপনাকে ভাবনার খোরাক যোগাবে, ভাবতে বাধ্য করবে এবং জ্ঞান তৃষ্ণা যে বাড়িয়ে দেবে তা চোখ বুজেই বলা যায়।
Read all reviews on the Boitoi app