Published
May 22, 2023
Language
বাংলা
Pages
42
Published by
সাহিত্যদেশবাংলা শিশু-কিশোর নাটকের উদ্ভবের প্রকৃত সময়কাল খুব বেশি দিনের নয়। রবীন্দ্রনাথের হাত ধরেই শিশু-কিশোর উপযোগী নাটকের বিকাশ ঘটেছিলো। বাংলায় প্রথম শিশু-কিশোর নাটক প্রকাশিত হয় ‘বালক’ পত্রিকায়। নাটকটি নাম ছিলো ‘মুকুট’। মুকুট অভিনীত হয়েছিল জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়িতে। শিশুদের জন্য নাটক মঞ্চায়নের ক্ষেত্রেও ঠাকুরবাড়ির পরিমÐল ও রবীন্দ্রনাথের অগ্রণী ভূমিকা স্মরণযোগ্য। বাংলাদেশে শিশু-কিশোর নাটক নির্মাণ এখনো ততটা অগ্রসর নয়। মঞ্চেও তেমন একটা শিশু-কিশোরদের নাটক মঞ্চস্থ হতে দেখা যায় না। পত্রিকা বা বই আকারেও তেমন একটা নাটক আমরা পাই না। এমন একটি পরিস্থিতিতে নাসিরুদ্দীন তুসী মুক্তিযুদ্ধের চেতনানির্ভর, একুশে চেতনায় উজ্জীবিত শিশু-কিশোর উপযোগী একটি নাটক লিখেছেন। নাটকটির নাম ‘অপারেশন সুবর্ণপুর’। নাটক হল শিশু-কিশোরদের মনোবিকাশের সহায়ক। এ নাটকে আনন্দই মুখ্য বিষয়। সঙ্গে থাকবে মজার উপাদান। শিশুরা কল্পনার জগতে বিচরণ করতে ভালোবাসে। শিশুমাত্রই কল্পনাপ্রবণ। নাটকের বিষয় ও চরিত্ররা যেন তার কল্পনার জগতে ডানা মেলতে সাহায্য করে। শিশুর সহজাত চাহিদা, ঘটনার হঠাৎ পরিবর্তন। শিশু-নাটকে পরিমিত ভয় বা উত্তেজনার পরিবেশ থাকতেই পারে। যাতে নাটকটি দেখে বা পড়ে শিশু রোমাঞ্চিত হতে পারে। নাসিরুদ্দীন তুসী রচিত নাটকের অন্যতম দুটি চরিত্র রাহাত ও রুমা শহরের স্কুলে পড়া দুই ভাই-বোন। বাবা চাকরিজীবী। মা একজন নারী নেত্রী, সমাজকর্মী। রাহাত স্কুলের সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে। তাদের শিশু গৃহকর্মীকে একুশে ফেব্রæয়ারি উপলক্ষে বর্ণমালা শিক্ষা দিয়ে পুরস্কার অর্জন করে। এভাবেই নাটকের দৃশ্যগুলো পর্যায়ক্রমে আসতে থাকে। শিশু-কিশোরেরা চায় কুকুর, বেড়াল, পাখি, বাঘ, সিংহ, সাপ, শেয়াল, হরিণ, বানর ইত্যাদি জীবজন্তু তার সঙ্গে কথা বলুক। নাটকে ন্যায়-অন্যায়, সৎ-অসতের দ্বন্দ্বের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। ঘটনার আকস্মিকতা, ইঙ্গিতধর্মিতা ও সংলাপের ব্যঞ্জনধর্মিতার প্রয়োগ এই নাটকে না থাকাই শ্রেয়। উদ্ভট চরিত্র, উত্তেজনায় পরিবেশ ভূত-প্রেত, রাক্ষস-খোক্কস ইত্যাদি নাটকে বেশি করে দেখালে ভালো হয়। আলোচিত এ নাটকে বার্ষিক পরীক্ষা শেষে ছুটিতে মামারবাড়ি সুবর্ণপুর গ্রামে যায় রাহাত ও রুমা। সম্রাট ও হৃদয় দুজন পরস্পর চাচাতো ভাই। এরা দুজনেই রাহাতের স্কুলের ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং তাদের গ্রামের বাড়িও সুবর্ণপুর। তারাও গ্রামের বাড়িতে বেড়াতে যায়। এরপর গ্রামে রাহাতদের ছুটিকালীন অবসরে-শিশুদের শিক্ষাদান, প্রতিবন্ধী অসহায় শিশুদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা। শিশু অপহরণকারী চেয়ারম্যানের মুখোশ উন্মোচন করা। ভূতুরে বাড়ির রহস্য আবিস্কার। মহৎ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ জেলা প্রশাসক কর্তৃক পুরস্কার ও সম্মাননা প্রাপ্তি। মঞ্চে মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রতি সম্মান জানিয়ে অনুষ্ঠান উপস্থাপন এসব নিয়েই অপারেশন সুবর্ণপুর-এর কাহিনি আবর্তিত। শিশু-কিশোরদের একুশ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করবে এই নাটকটি। অপারেশন সুবর্ণপুর-এর একটি মজার চরিত্র অন্তু। গ্রামের এতিম অসহায় ছেলে অন্তু। বানরের খেলা দেখিয়ে টাকা উপার্যন করে তাই দিয়ে জীবন ধারণ করে। বানর দিয়ে নানা রকম খেলা দেখিয়ে পাঠক কিংবা দর্শক মনে হাস্যরসের সৃষ্টি করে অন্তু। বারোটি দৃশ্যে বিভক্ত এ নাটকটির মঞ্চসজ্জা, আলো, চরিত্র বিন্যাসসহ প্রায় সব বিষয়ই সুনিপুণভাবে তুলে ধরেছেন নাট্যকার নাসিরুদ্দীন তুসী। বিভিন্ন স্কুলের ছাত্র ছাত্রী এ নাটকটি পড়ে ও অভিনয় করেও আনন্দ পাবে। বইটি মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনিকে উৎসর্গ করা হয়েছে। পুরো বইটিই অলংকরণ করা হয়েছে নানা ছবি দিয়ে। নাটকটির পাঠ ও মঞ্চায়ন যতো বেশি হবে ততোই শিশু-কিশোরদের মধ্যে শুভবুদ্ধি ও ভালো কাজের প্রতি উৎসাহ বাড়বে।