রাতের অন্ধকারে শ্রাবণ্য আমার ঘরে এলো। তার পরনে টকটকে লাল রঙের বেনারশী, গলায় পদ্মফুলের মালা, হাতে দুটো করে রূপার বালা। শয়িত আমি পাথুরে দানবের মতো শক্ত ও অনড় হয়ে গেলাম। প্রাণপণ চেষ্টা করেও বিছানা ছেড়ে উঠতে পারছি না। মাথাটা পাহাড়ের মতোই ভারী ও অটল হয়ে ওঠল। বুকের উপর পাতলা কাঁথাটাকে লোহার মতো শক্ত ও অনমনীয় বোধ হচ্ছে। নড়নে ব্যর্থ আমি হাত-পায়ের চেষ্টা ছেড়ে দিয়ে দুর্বল গলায় শুধালাম, " শ্রাবণ্য? আজ কি তোর বিয়ে? সে হাসল। বেহালার সুরের মতো সেই হাসির শব্দ, ছন্দ। অপুরু ঠোঁটে যেন মুক্ত বসেছে! যার শূভ্র সমুজ্জ্বল সৌন্দর্য ছড়িয়ে পড়েছে শ্রাবণ্যর মুখটায়। বসন্তের পাখির মতো সুরেলা কণ্ঠে উত্তর করল, " হ্যাঁ। আপনার সাথে। " কথাটা শোনামাত্র গ্যাস বেলুনের মতো আমার হুঁশ উড়ে গেল। পাথুরে দানব থেকে মানুষ হওয়ার বর পেলাম প্রার্থনা ছাড়াই। মাথা হালকা ও নমনীয় হওয়ার শক্তি পেল। কাঁথা নরম ও লঘু হয়ে ওঠল। হাতে-পায়ে জোর ফিরে পেতে এক ঝটকায় সেটি সরিয়ে উঠার জন্য তোরজোর শুরু করলাম। তন্মধ্যে শ্রাবণ্য দৌড়ে এলো। আমার কাঁধে ডান হাতটা রেখে বাঁধা দিল। আমি থমকে গেলাম নাকি ঝুরঝুরে পড়ে গেলাম বুঝতে পারলাম না। বুঝার চেষ্টাও করলাম না। শুধু চোখদুটি আচ্ছন্নতায় বুঁজে এলো। শ্রাবণ্যর স্পর্শটাকে অনুভব করতে মস্তিষ্কে ও শরীরের প্রতিটি রক্তকণিকা সুখের আন্দোলনে উন্মত্ত হলো। সেই আন্দোলনের সুর ও নৃত্যে নিমগ্ন হতে মনে হলো, এই স্পর্শ কোনো মনুষ্য হাতের নয়, অন্য কিছু। যার রূপ আমি বাস্তবে দেখিনি, কল্পনায়ও নেই। আমার এই অচেতন্য দুনিয়ায় শ্রাবণ্যর সেই মোহিত কণ্ঠটা টুকা দিল, " উঠছেন যে? আপনার এখন উঠা বারণ। " বারণের কারণ জানার প্রতি কোনো আগ্রহ নেই, কৌতূহলও না। অবাধ উৎসাহে উত্তেজিত স্বরে বললাম, " উঠব না? বিয়ে করতে হবে তো। ঘর সাজানো, অতিথি আপ্যায়ন, কাজীকে ডেকে পাঠানো সব কাজই বাকি। শুয়ে থাকলে এসব কে করবে? " " কেউ করবে না। আপনাকেও করতে হবে না। " আমি অবাক চোখে তাকালাম। দ্বিধায় পড়লাম। শ্রাবণ্যর ঠোঁটে তখনও মুক্ত বসানো হাসি উপস্থিত আছে৷ আমার কাঁধ থেকে হাতটা সরিয়ে সুন্দর করে বসল আমার পাশে। অতঃপর সুমিষ্ট স্বরে সুধীরভাবে বলল, " বিয়ে করতে এত কষ্ট করতে হয় না, নাসিফ ভাই। শুধু ঠোঁট নেড়ে বলবেন, কবুল। এক বার, দুই বার, তিন বার। ব্যস, আমরা হয়ে গেলাম স্বামী-স্ত্রী। সারা জীবনের সাথী। " আমার চোখে-মুখে বিস্ময়ের প্রলেপ পড়ল। কণ্ঠে অবিশ্বাস্যের আভাস রেখে সন্দিগ্ধ গলায় সুধালাম, " বিয়ে করা এত সহজ? " " হ্যাঁ। আপনি সবসময় সহজ কাজকে কঠিন বানান। সহজভাবে করা শিখেননি এখনও। আর কবে শিখবেন, নাসিফ ভাই? বুড়া হলে? " আমি বাঁধা মুক্ত ছিলাম। তাই উঠে বসলাম এক লাফে। খানিক প্রতিবাদের সুরে বললাম, " আমি সহজ কাজকে কঠিন বানাই না। তুই বানাস। এখনও বানাচ্ছিস। বিয়ে করতে এসে হবু বরকে ভাই বলে ডাকছিস। এরপরও ঠোঁট নেড়ে কবুল বলা যায়? পাপ এসে আমার ঠোঁটে তালা লাগিয়ে দিবে না? " শ্রাবণ্য এর কোনো উত্তর দিল না। সশব্দে হেসে ওঠল। এই হাসিতে বেহালার মতো সুর নেই, ছন্দ নেই। মুক্তোর মতো শূভ্র সমুজ্জ্বল সৌন্দর্য ছড়ানোর পরিবর্তে মুখটা কুৎসিত হয়ে ওঠল। আমি ভয় পেলাম, কেঁপে ওঠলাম। আতঙ্কিত চিত্তে খাট থেকে নামতে গিয়ে গড়িয়ে পড়লাম মেঝেতে। মাথায় আঘাত পেতে আহত সুর বের হয়ে এলো গলা থেকে। আঘাত স্থানে হাত রেখে উঠে বসতে দেখলাম, রুমে আবছা অন্ধকার। শ্রাবণ্য কোথাও নেই। আমার বিছানার পাশে আরেকটি বিছানা নজরে আসতে হুঁশ এলো। বুঝতে পারলাম এতক্ষণ ঘুমের ঘোরে স্বপ্নে বাস করছিলাম। যে মেয়ে আমাকে দেখলে নাক-মুখ কুঁচকে ফেলে, হাঁটার পথ বদলে ফেলে সেই মেয়ে আমার রুমে আসবে! খাটে বসবে! আমার কাঁধে হাত রেখে যত্ন করবে! এ অভাবনীয়, কল্পনাতীত।
এই নিয়ে ২ বার পড়েছি। দ্বিতীয় বার বেশি ভালো লেগেছে। ইশ এত সুন্দর লেখনী রোকসানা আপুর,শুধু মুগ্ধ হয়ে পড়ে যাই..শ্রাবন্যর এত অবহেলা সহ্য করেও নাসিফের একতরফা ভালোবাসা দেখে গল্পটা ফার্স্ট বেশিই কাল্পনিক লেগেছিল, কিন্তু অতীত কাহিনী পড়ার পর শ্রাবণ্যের ব্যক্তিত্যে মুগ্ধ হয়েছি।। নাসিফের ভালোবাসা ছিল অত্যন্ত গভীর,যা মন ছুঁয়েছে.. শব্দ বিন্যাস গোছানো এবং সুন্দর ছিল.. ব্লাউজের হুক কান্ডে খুবই হেসেছি😁 সব মিলিয়ে খুউউব সুন্দর গল্প ছিল রোকুপু।।
Read all reviews on the Boitoi app
বিবি তার পর এখানে ভালোবাসা নেই এই দুইটা ই-বুক এর থেকে এটা একটু না অনেকটাই আলাদা ছিলো! শ্রাবন্য আর নাসিফ এর চরিত্র দুইটি খুব সুন্দর ভাবেই উপস্থাপন করেছে লেখিকা আপু! শ্রাবন্য আর নাসিব এর রাগ, অভিমান, খু'নসুটি গুলো ছিলো মনে রাখার মতো 🖤🖤 কিন্তু শেষ এর পার্ট গুলো পড়ার পর আমার কেমন জানি লজ্জা লজ্জা পাচ্ছিলো 🙈🙈 ইশ লেখিকা আপু এতো দুষ্টু 🙈 লেখিকা আপুকে অনেক ধন্যবাদ এতো সুন্দর সুন্দর গল্প উপহার দেওয়ার জন্য অনেক সুন্দর সময় কাটিয়েছি গল্পটা পড়ে শুভকামনা রইলো লেখিকা আপু ❤️ ভালোবাসা দিয়ে গেলাম 😘😘
Golpo ta bhinna dharaner... valo legechhe...
অসম্ভব সুন্দর একটি গল্প।লেখিকার সব গল্পই সব সময় অসাধারণ সুন্দর হয়। তিনি খুব ভালো লিখেছেন সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। ভিন্ন ধরনের ভিন্ন থীমের গল্প এটি। পড়ে খুব ভালো লেগেছে। ❤শুভকামনা সব সময়।❤