আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চোখ বন্ধ করে ব্লাডি মেরি নামক ডাইনীকে ডেকে আনার গল্প আমরা অনেক পড়েছি কিংবা শুনেছি। সুরভী নামের এক নারী ব্যক্তিগত জিঘাংসা থেকে ডেকে নিয়ে আসে ভয়ংকর ব্লাডি মেরি কে। সে নিজেও কি জানতো কি হতে পারে ভবিষ্যতে?
বাসে যাচ্ছিলাম, লন্ডন থেকে ম্যানচেস্টার। ব্যাগে আছে দ্য পাওয়ার অব জিওগ্রাফি আর কমলকুমার মজুমদারের গল্পসমগ্র। কমলকুমার শুরু করলাম। কিন্তু ভদ্রলোকের লেখা খুব খটোমটো (সাধুভাষায় লেখেন উনি)। বন্ধ করে বইটইতে ঢুকলাম। হরর সার্চ দিয়ে এটা পেলাম। নূহা চৌধুরীর ঝরঝরে লেখার সাথে আগে থেকেই পরিচিত। প্রথমের বলে রাখি, আমি প্রচন্ড হরর প্রেমিক। তাই ভুমিকা পড়েই একটু মন খারাপ হলো৷ মনে হলো, শুরুতেই স্পয়লার পেয়ে গেলাম। ব্লাডি মেরি ব্যাকস্টোরি না দিয়ে, শুধুমাত্র মেরির ব্যাকস্টোরি যদি দিতেন লেখক, তবে মনে হয় সাসপেন্সটা আরেকটু জমে যেত ভুমিকাতেই। কান্নাদি আয়না নিয়ে আরো বেশি বিস্তারিত আলাপ থাকলে ভাল লাগত। ঘটনায় ঢুকতে লাগলাম। সারাহ যখন প্রথম ব্লাডি মেরির অস্তিত্ব টের পেল, ওই অংশটুকু আরেকটু গ্রাফিক, আরেকটু ডিটেইল হলে বেশ জমে যেত। মনে হয় ডাইহার্ড হরর ফ্যান বলে ওই মুহুর্তে ওই চাপা সাসপেন্সটা আশা করেছিলাম। থামুন থামুন। এবার ভাল লাগাগুলো বলি, এই গল্পে উঠে এসেছে হিংসা আর ইন্সিকিউরিটির আরেক গল্প। হররের সবচে মজার দিক হলো, হররের আবহে মেটা-কমেন্টারির যে ব্যাপারটা সেটা সুন্দর করে বলে ফেলা যায়। সারাহ নয়, একবার সুরভী হয়ে ভাবুন। যার সারাজীবন তুলনা শুনতে হয়েছে বোনের সাথে। মানুষ-সুরভীর থেকে সুরভী সুন্দর কিনা, ফর্সা কিনা, বিউটি স্ট্যান্ডার্ডের সবগুলো বক্সে টিক দিতে পারে কিনা সুরভী; সেটাই তো তার চারপাশ-সমাজের কাছে বেশি আগ্রহের জায়গা ছিল। এই ক্ষোভের জায়গাটা লেখক সুন্দরভাবে এক্সপ্লোর করেছেন। এই গল্পে মুখ্য নায়িকার থেকে নেতিবাচক চরিত্র তাই যতটা না নেতিবাচক, তার থেকে সে অনেক বেশি এন্টি-হিরোইক। গল্পের রোমান্টিক ট্যুইস্টটা আনন্দের ছিল। কান্নাদি কথা একটা শুভ প্রচেষ্টা। কান্নাদি কথা খুব জটিল নয়, বরং ঝরঝরে, এক বসায় পড়ে ফেলার মত। একজন হরর ফ্যান হিসেবে লেখকের কাছে আরো হরর লেখা চাই, যেখানে তিনি কান্নাদি কথাকেও উতরে যেতে পারবেন। শুভকামনা।
Read all reviews on the Boitoi app
৩.৫ তারা। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ব্লাডি মেরীকে তিনবার ডাকলেই সে আয়নায় উপস্থিত হয়, এই গল্পটা পুরোনো। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন, এই গল্পের পেছনেও যে একটা গল্প আছে? আর যে গল্পটা আছে তা কোন মিথ নয়, ইতিহাস। সেই ইতিহাস যেদিন জেনেছিলাম সেদিন থেকে এই ব্লাডি মেরীর গল্পটা যেন আরো ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছিল। আর সেই ব্লাডি মেরীকে নিয়েই এই গল্প, আয়না রহস্যঃ কান্নাদি কথা। আয়নার ও একটা ইতিহাস আছে, জাত আছে, মিথ আর লেজেন্ডসও নেহায়েত কম নয়। আয়না নিয়ে আছে অনেক ধারণা ও বিশ্বাস। এই আয়না কথন আর ব্লাডি মেরীর ইতিহাসের যে বর্ননা লেখিকা দিয়েছেন তা এক কথায় অনবদ্য। ইতিহাস আর গল্পের মিশেলে কাহিনীটা যখন একটু করে আগাচ্ছিলো তখন মন শুধুই এর শেষটা জানতে উদগ্রীব হয়ে উঠছিল। কী হবে শেষমেষ? এটা একটা প্রতিহিংসামূলক গল্প। যদিও ব্লাড মেরীকে টেনে এনে একে একটা সুন্দর ফ্যান্টাসি গল্পে রূপ দিয়েছেন লেখিকা। কিন্তু বাস্তবে এমন ঘটনা ঘটে হরহামেশাই। গল্পটা যেভাবে আস্তে আস্তে ডালপালা মেলেছিল তাতে আমি আরো বিস্তারিত কিছু এক্সপেক্ট করছিলাম। কিন্তু গল্পটা যেন হঠাৎ করেই শেষ হয়ে যায়। বুঝেছি ব্লাডি মেরী অনেক শক্তিশালী, তাই বলে এভাবে জিতে যাবে কেন? তবে আশার আলো দেখেছি গল্পের একদম শেষে। পাঠক হিসেবে গল্পের একটা সিক্যুয়ালের দাবী জানিয়ে যাচ্ছি। নূহার লেখনী বরাবরই প্রশংসনীয়। গল্পের যে প্লট তাও আমার অত্যন্ত পছন্দের। কিন্তু পড়তে গিয়ে বেশ কিছু বানানের এদিক সেদিক চোখে পড়লো। বইটই এডিটরদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এই ছোট ছোট ব্যাপারগুলো পড়ার মধ্যে একধরণের বিরক্তি নিয়ে আসে। সব মিলিয়ে এক বসায় পড়ে ফেলার জন্য সুন্দর একটা গল্প। ইবুকটা পাওয়া যাবে বইটই অ্যাপে। ও আরেকটা কথা, এই বই যাকে উৎসর্গ করা হয়েছে সেই ব্যক্তি আমি।
গল্পটা ফেসবুকে কিছুটা পড়েছিলাম। ইতিহাসের সাথে একটা দারুণ যোগসূত্র রেখে ভয়ের গল্প লেখা সহজ নয়। নূহা চৌধুরী সেটা সুন্দর ভাবে করেছেন। এন্ডিংটাও মনে হয়েছে যথাযথ হয়েছে। আরো বড় কলেবরে আসলে আরো ভাল লাগতো। দুই এক জায়গায় বানানের অসংগতি চোখে পড়েছে। এটা ঠিক হলে পাঠক হিসেবে আরো খুশি হতাম। হরর জনরায় দেশে বেশি লেখক লিখেন না। নূহা চৌধুরী নিয়মিত হলে ভাল লাগবে।
লেখক নূহা চৌধুরীর লেখার স্টাইলটা গতানুগতিক নয়। তাঁর গল্প বলায় অন্যরকম একটা ছন্দ আছে। হরর জনরার এই গল্পের ভাঁজে ভাঁজে তিনি বেশ কিছু ঐতিহাসিক আর ভৌগোলিক ফ্যাক্টয়েড ঢুকিয়ে দিয়েছেন, যা গল্পটিকে উপভোগ্য করে তুলেছে। ব্লাডি মেরির কথা জেনেছিলাম খুব ছোট থাকতে, তখন অনেকদিন পর্যন্ত অন্ধকার ঘরের আয়নাকে ভয় পেতাম। এই গল্পটা সেই ভয়ের কথা মনে করিয়ে দিলো! এই ই-বুকটি পড়ে ভালো লেগেছে।
আমার ভালো লাগে তোর লেখা গল্প। বরাবরের মতন এটাও💚