এ দেশের ক্ষণজন্মা অগ্রসর দার্শনিক আরজ আলী মাতুব্বর জীবদ্দশায় যত প্রাসঙ্গিক ছিলেন, বর্তমানে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক; নিশ্চিতভাবে আগত ভবিষ্যতে আরও বেশি প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠবেন। তিনি যখন স্বশিক্ষিত হয়ে নিজ চেষ্টায় বিজ্ঞান, দর্শন ও ধর্মের মতো কঠিন সব বিষয়ে মুক্তচিন্তার ভিত্তিতে স্বাধীন হয়ে জ্ঞান চর্চা করেন এবং নিজস্ব মতামত লিপিবদ্ধ করেন তখন পাকিস্তানী শাসকদের কাছে বুদ্ধিজীবীরা ছিলেন সন্দেহের পাত্র। স্বাধীনচেতা বুদ্ধিজীবীদের মনে করা হতো দেশের শত্রু। বুদ্ধিবৃত্তির চর্চাকারী যারা গতানুগতিক চিন্তাভাবনার ঊর্ধে উঠে মুক্তচিন্তার অনুসরণে স্বাধীনভাবে নিজস্ব বক্তব্য উপস্থাপন করতেন, শাসকবৃন্দের নিপীড়ন তাদের সইতে হয়েছে। রাষ্ট্রের রুদ্ররোষের শিকার হতে হয়েছে তাদের। নানাভাবে নির্যাতিত, নিপীড়িত হয়ে তার মূল্য দিয়েছেন তারা অপ্রচলিত চিন্তা-চেতনা প্রচারের জন্য। শুধু রাষ্ট্রযন্ত্র নয়, রক্ষণশীল সমাজ, বিশেষত ধর্মীয় নেতাদের রোষের পাত্রও হয়েছেন তারা, যেখানে আধ্যাত্মিক এবং পারলৌকিক বিষয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। আরজ আলী মাতুব্বর উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত না হয়েও সত্যের সন্ধানে দার্শনিক চিন্তা-ভাবনা করেছেন মুক্তমন নিয়ে এবং আকন্ঠ চিত্তে অকুতোভয়ে নিজের মতামত ব্যক্ত করেছেন লিখিতভাবে। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাবঞ্চিত একজন গ্রামীণ কৃষকের এই অনধিকার চর্চা বরিশাল বি এম কলেজের কতিপয় অধ্যাপককে বিস্মিত এবং মুগ্ধ করলেও ধর্মীয় নেতা এবং সমাজপতিরা তার ঔদ্ধত্যে স্তম্ভিত এবং ক্রুদ্ধ হয়েছেন।