বাবার মৃত্যুর পর আমি দুই দশকের বেশি নির্বাসিত জীবন কাটাতে বাধ্য হয়েছি। সময়টা পার করেছি নীরবে-নিভৃতে পিছনে ফেলে আসা জীবনের প্রতিটা স্মৃতির টুকরো জোড়া লাগানোর চেষ্টায়। সবকিছুর একটা নির্দিষ্ট সময় থাকে, তাই এরকম একটা বই লেখার মতো উপযুক্ত লেখক হওয়ার, আত্ম-প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম হওয়ার এবং ভেতরের অহংবোধ ঝেড়ে ফেলার জন্য আমার কিছু সময়ের প্রয়োজন ছিল। সব প্রস্তুতি নিয়ে তবেই লিখতে বসেছি। আমার বাবা জন্মের দিন থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমার বন্ধু, আমার পথ-প্রদর্শক, আমার শিক্ষক ও বিশ্বস্ত পরামর্শদাতা ছিলেন। আমি অনেকবার বাবার কাছে আবেদন জানিয়েছি নিজের জীবনের সত্যিকারের কাহিনি লিখতে। কিন্তু প্রতিবারই বাবা "না" করে দিয়ে বলতেন: গ্রেগরি, ইতিহাস লেখা শুরু করার আগে তোমাকে তা নির্মাণের কাজ শেষ করতে হবে (বাবা আমাকে আদর করে গ্রেগরি নামে ডাকতেন (রাশিয়ার গ্রেগরি রাসপুটিন নামের রহস্যপুরুষের বড় ভক্ত ছিলেন বাবা। সেই সূত্রে আমার এ নাম রেখেছিলেন)। বাবার মৃত্যুর পর শপথ নিয়েছিলাম আমি তাঁর হত্যার প্রতিশোধ নেব বলে, আবার দশ মিনিটের মধ্যে তা ভেঙেও ফেলেছি। পরের দুই দশকেরও বেশি কাল যাবৎ সহনশীলতা, শান্তিপূর্ণ জীবনযাপন, সংলাপ, ক্ষমা, ন্যায়বিচার আর সমন্বয় সাধনের মাধ্যমে জীবন কাটিয়েছি। এ বই কারও দিকে আঙুল নির্দেশ করার জন্য নয়, বরং কলম্বিয়া ও তার রাজনীতি কীভাবে কাজ করত এবং দেশটি কেন আমার বাবার মতো মানুষ উৎপন্ন করত তার প্রতিফলন তুলে ধরতে লেখা হয়েছে। জীবনের প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধাবোধ আছে, সেই জায়গা থেকে আমি এ বই লিখেছি। অন্য যারা বাবাকে নিয়ে বই লিখেছেন তাদের মতো গোপন কোনো উদ্দেশ্য আমার নেই।