প্রায় রাতেই খুব ছোটবেলার একটা স্মৃতি আজও মনে পরে আমার। ছোটবেলার তেমন স্মৃতি না থাকলেও ঐ স্মৃতিটা আমার মনে পাকাপোক্ত স্থান দখল করে আছে আজও। বন্ধুর সাথে খেলতে গিয়ে সেদিন ঝগড়া বাঁধিয়েছিলাম, নিজের লাটিম ছুঁড়ে মরেছিলাম আমি। আমাকে ফাঁসাতে সেটা ওর চোখের কাছটায় মারাত্মক জখম করে দিয়েছিলো সামান্য আঘাতেই, বজ্জাত লাটিম! খুব স্বাভাবিক ওর বাবা-মা বিচার দিতে এসে বাবাকে পেয়ে দুটো কথা শোনানোর সুযোগ হাতছাড়া করলেন না। আরেকটু হলেই চোখে লেগে যেতো, ভাগ্যিস চোখটা বেঁচে গেলো। ওর চোখ বাঁচলেও আমি কিন্তু বাবার হাত থেকে বাঁচতে পারলাম না। বাবা আমাকে তাদের সামনেই পিটালেন। মার খাওয়া থেকে বাঁচতে আমি পালিয়ে গেলাম বাড়ির পিছনে৷ বাড়িতে সামনের দিকে সীমানা প্রাচীর থাকলেও পিছনটা ছিলো খোলা জঙ্গলের মতো। গাছগাছালি ভরা এ জায়গাটায় আমরা খেলাধুলা করতাম। এখানে আমাদের জায়গাও যেমন ছিলো অন্য বাড়ির অংশও ছিলো তেমন। দাদী সেখানে নিজ হাতে পুঁইশাক, কুমড়া, লাউ ইত্যাদি গাছ লাগিয়ে মাচার মতো তৈরী করে দিয়েছে। এখানটায় এলে মনে হয় এ যেন শহরের মধ্যে এক টুকরো গ্রাম। আমি লাউয়ের মাচার নিচে একটা জায়গায় লুকিয়ে ভয়ে ঘুমিয়ে পরলাম। আমি যখন লুকিয়েছি তখন দিনের আলোতে ঝকঝকে ছিলো চারপাশ। ঘুম ভাঙলো যখন বাইরে তখন উথালপাথাল জোছনা। লাউ গাছের মাচা গলে জোছনা মাটি ছুঁয়ে লছে টুকরো টুকরো হয়ে। মাটির বুকে তৈরী করেছে পাতা, ডালপালার আলপনা। চারদিকে হুহু বাতাস। আমি ভয় পেয়ে গেলাম বাতাসের দাপট দেখে। চারপাশের গাছগুলো এখনি ভেঙে পরবে মনে হচ্ছিল। ছোট মানুষ, বুঝই বা কতটুকু ছিলো? মনে মনে আল্লাহকে ডাকছিলাম আমি। নূপুরের শব্দে টনক ফিরলো আমার। তারপর হঠাৎ মনে হলো দাদীর কাছে শুনেছি রাতের বেলা পরী নাকি নামে এমনি ঝোপঝাড়ের কাছে, একা কাওকে পেলে, পছন্দ হলে তারা তাকে সঙ্গে করে নিয়ে যায়। এমন ভাবনার সাথে সাথে মিষ্টি গন্ধ অনুভব করলাম আমি, উগ্র এ গন্ধ আমার ভয়কে উষ্কে দিয়েছিলো । আমার ভয় আরো পোক্ত হলো। সত্যি পরী-টরি নাতো! এমন সময় দেখলাম মোমদানী হাতে অতিমানবী একজন এগিয়ে আসছে জঙ্গলের ভিতরে। চাঁদের আলোয় তার আগমন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। ঝুম ঝুম করে বাজা নুপুরের শব্দ ধীরে ধীরে আরো কাছে আসতে লাগলো আমার। আরেকটু কাছে এলো যখন বাতাসটা বেড়ে গেলো আবারো। ভীরু পদক্ষেপে বাতাস থেকে মোমবাতির আলোটাকে বাঁচিয়ে চলছেন তিনি। প্রতিটা পদক্ষেপে নূপুরের শব্দ উসকে দিচ্ছে ওর ভয়কে। ততক্ষণে মেঘেরা আকাশের দখল নিয়েছে,বৃষ্টি এলো বলে। আমার ভয় বাড়তে থাকলো ক্রমশ। মোমবাতির রহস্যময় লাল আলোতে এত সুন্দর মুখোচ্ছবি ভেসে উঠেছে যে এ মানুষ হতেই পারে না, স্বর্গের পরীই হবে হয়তো। গায়ে গহনা , পায়ে নূপুর, হাতের চুড়ির টুংটাং শব্দ। জঙ্গলের আরেকটু গভীরে ঢুকে হাঁক দিলো সেই পরী- “দিগন্ত” তার ডাক শুনে আমি প্রথমে ভয় পেলেও অবাক হলাম পরীরা আমাদের ভাষায় কথা বলতে পারে? দ্বিতীয় ডাকে মনে হলো এই পরীটা আমার চেনাজানা কেও, তারপর ক্ষণকাল বিরতি নিয়ে তৃতীয় ডাক হাকলো সেই পরী, তারপর মনে হলো দাদী এও বলেছিলো অশরীরী কিছু তিনবার ডাকে না, তখন স্থির হওয়া মোমবাতির আলোতে দেখলাম তাকে, তারপর দৌড়ে ঝোপ থেকে বেরিয়ে জড়িয়ে ধরলাম সেই পরীকে। কারন সেইদিনকার সেই পরীটা আর কেও না, তিনি ছিলেন আমার “বিমাতা”
আপু আপনার প্রায় সব গুলো ই-বুক আমি পড়েছি। "আনাবিয়া" তার মধ্যে সেরা। অসাধারণ লেখনী শৈলী মায়ের দুটি রুপ দেখানো হয়েছে.... এতো সুন্দর ভাবে.... ❤❤দ্বিগন্ত চরিত্রটি পরিপূর্ণতা পেয়েছে তার পরী মায়ের জন্য।
Read all reviews on the Boitoi app
❤️❤️❤️