Published
March 4, 2024
Language
বাংলা
Pages
42
Published by
বইটইদ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর হতে স্নায়ুযুদ্ধ সমাপ্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত পৃথিবী মোটা দাগে দুটি রাজনৈতিক আদর্শে বিভক্ত ছিলো - পশ্চিমা গণতন্ত্র এবং সোভিয়েত সমাজতন্ত্র। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে গেলে দীর্ঘ সময় ধরে চলমান এই স্নায়ুযুদ্ধের অবসান ঘটে। কিন্তু এরপর কী হবে? স্যামুয়েল পি. হান্টিংটন তত্ত্ব দিয়েছেন এরপর সূচনা হবে সভ্যতা-কেন্দ্রিক সংঘাত ও রাজনীতি যুগের। তিনি তত্ত্ব দেন বিশ্ব রাজনীতির রূপরেখা সাত থেকে আটটি সভ্যতার মাঝে ঘুরপাক পাবে, যেখানে সংস্কৃতিক ও ধর্মবোধ গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করবে। সভ্যতাগুলো হলো - পশ্চিমা, কনফুসিয়াস, জাপানিজ, ইসলামিক, হিন্দু, স্লাভিক-অর্থডক্স, ল্যাটিন আমেরিকান ও আফ্রিকান। আপন সভ্যতার বৈশিষ্ট্যের অনুযায়ী পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্র অর্থনীতি ও রাজনৈতিক জোট গঠন করবে এবং নির্দিষ্ট ফাটল রেখায় তারা অপর সভ্যতার সাথে সংঘাতে যুক্ত হবে। উদাহরণ স্বরূপ, পশ্চিমা ইউরোপ তাদের সংস্কৃতি এবং ক্যাথলিক খ্রিষ্টিয় চেতনার ভিত্তিতে তৈরী করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন; মেক্সিকো-কানাডা-আমেরিকা তাদের উত্তর আমেরিকান সংস্কৃতির ভিত্তিতে তৈরী করেছে 'নাফটা (NAFTA)'; এবং নন-আরব হয়েও কেবল ইসলাম ধর্মীয় মূল্যবোধের ভিত্তিতে এগারোটি মুসলিম রাষ্ট্র মিলে তৈরী করেছে ইকোনোমিক কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন। অপর দিকে চীন ও জাপান নিজেরাই এক একটি সভ্যতা (অর্থাৎ, তারা একই সাথে সভ্যতা ও রাষ্ট্র)। পূর্বাঞ্চলীয় পৃথিবীর বহু রাষ্ট্র (ভারত, পাকিস্তান ইত্যাদি) এক সময় পশ্চিমাদের উপনিবেশ ছিলো। কিন্তু ভবিষ্যৎ পৃথিবীতে তারা নিছক কোনো ঔপনিবেশিক বিষয়বস্তু হয়ে থাকবে না। তারাও আন্তর্জাতিক রাজনীতিকে প্রভাবিত করবে। নিজেদের সামরিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতাকে বিস্তৃত করবে। সোভিয়েত ভেঙ্গে যাওয়ায় রাশিয়ার সামরিক ক্ষমতা কিছুটা খর্ব হলেও চীন অপরদিকে উদীয়মান একটি শক্তি, যার রয়েছে উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন ক্ষমতা, বিশালাকার জমি ও পরিশ্রমী মানব সম্পদ, প্রচুর মূলধন সক্ষমতা, এবং উদ্যোগতা ও বাজারজাত করণে সক্ষম দক্ষ কুশিলব। এই চীন (কনফুসিয়ান) ক্রমেই অ-পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলোকে (বিশেষত ইসলামিক) সামরিক ভাবে শক্তিশালি করার পাশাপশি তাদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নে চেষ্টা করবে। তাই অদূর ভবিষ্যতে কনফুসিয়ান-ইসলাম হয়ে উঠবে আমেরিকার নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি। এমতাবস্থায় পশ্চিমা-আমেরিকানদের করণীয় কী? এই সব প্রশ্নের উত্তর নিয়ে ১৯৯৩ সালে ফরেন অ্যাফেয়ার্স জার্নালে স্যামুয়েল হান্টিংটন ‘সভ্যতার সংঘাত (ক্ল্যাশ অফ সিভিলাইজেশনস)’ শিরোনামে এই নিবন্ধটি প্রকাশ করেন। প্রকাশিত হওয়ার পর তা দীর্ঘ সময়ের জন্য আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে অন্যতম আলোচিত বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়। অনেক সমালোচক থাকা সত্ত্বেও, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের অনন্ত যুদ্ধ এবং চীনকে অবরুদ্ধ করার বর্তমান প্রয়াশে আর্টিকেলটির গুরুত্ব বারংবার সামনে চলে আসে।