'বিপ্লব স্পন্দিত বুকে, মনে হয় আমিই লেনিন' গণমানুষের কবি সুকান্ত ভট্টাচার্য [১৯২৬-১৯৪৭। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক ভারতের বাঙালীয় প্রথম মার্কসবাদী কবি। ক্ষণকালের এই কবি ছিলেন ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির একজন সার্বক্ষণিক কর্মী ও সদস্য। সেই সঙ্গে কবি, গীতিকার, নাট্যকার ও আরও অনেক কিছু! এত অল্প বয়সে বিরল প্রতিভাবান কবি বাংলা সাহিত্যে মাত্র ক'জন। যেমন: রবীন্দ্রনাথ, নজরুল ও জীবননান্দ। সুকান্ত ভট্টাচার্য বাংলা সাহিত্যের নতুন যুগ ও নতুন দিক-দর্শনের কবি। এর আগে মার্কসবাদী লেনিনবাদী সমাজতান্ত্রিক দর্শনের কবি বাংলা সাহিত্যে কাউকে খুঁজে পাওযা যাবে না। নজরুল ইসলাম অনেকখানি এগিয়ে থাকলেও তাঁর ধর্মীয় দিকভ্রান্তি সাম্যবাদে স্থির ছিল না। আর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন জগতের মধ্যে সুন্দরের কবি কিন্তু সুকান্তর কাছে সে সৌন্দর্য ছিল 'ক্ষুধার রাজ্য পৃথিবী গদ্যময়- পূর্ণিমা-চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি।' স্মতব্য যে, "নজরুল ইসলামসহ অন্যান্য যে সব কবি সামাজিক শোষণের ওপর কবিতা রচনা করেছেন তাঁদের সাথে সুকান্তর দুই দিক দিয়ে পার্থক্য। প্রথমত, তাঁরা কেউই যথার্থভাবে শ্রেণীসচেতন ছিলেন না। তাঁরা কেউই শোষিত জনতার সাথে উপযুক্তভাবে একাত্মতা বোধ করেননি। দ্বিতীয়ত, এই কারণেই এ জাতীয় রচনা তাদের সামগ্রিক রচনার মধ্যে একটা ক্ষুদ্র অংশ অধিকার করেছিল। সুকান্তর সমগ্র কাব্যপ্রচেষ্টাই কিন্তু শ্রেণীচেতনা দ্বারা উদ্বুদ্ধ। তিনি শ্রেণীসংগ্রামেরই কবি। এজন্যে বাংলাদেশের, ভারতবর্ষের এবং সারা পৃথিবীর বিস্তীর্ণ পরিসরে নানা সমস্যাকে কেন্দ্র করে এবং নানাভাবে তিনি শ্রেণীশোষণ ও শ্রেণী-সংগ্রামের কথাই নিজের কবিতায় চিত্রিত ও প্রতিফলিত করেন।"