Authors
Explore our collection of books across different authors
প্রফেসর ড. মেহমেদ গরমেজ
2
Books
13
Followers
প্রফেসর ড. মেহমেদ গরমেজ তুরস্কের একজন প্রথিতযশা আলেম। জীবন্ত কিংবদন্তি এই আলেমে দ্বীন ইসলামের মৌলিক বিষয়সমূহকে মানুষের সামনে তুলে ধরার ক্ষেত্রে নিরলসভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি ১৯৬২ সালে তুরস্কের গাজিআনতেপ শহরের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন একজন প্রখ্যাত আলেমে দ্বীন। তিনি তাঁর প্রাথমিক শিক্ষা তাঁর পিতার কাছেই সম্পন্ন করেন। নিজের পিতার কাছে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার পর উসমানী ধারার প্রখ্যাত আলেম, মেহমেদ আমীন আর এর নিকটে শিক্ষা লাভ করেন। ড. গরমেজ পূর্ব আনাতোলিয়ান অঞ্চলে অবস্থিত উসমানী খিলাফতের সময়কালে প্রতিষ্ঠিত মাদরাসা থেকে শিক্ষা লাভের সময় মহান আলেমে দ্বীন উস্তাজ মেহমেদ আমীন আর এর তত্ত্বাবধানে ছিলেন। সেসময় তিনি একইসাথে গাজিআনতেপ মাদরাসায়ও পড়াশোনা করেন এবং সেখান থেকে কৃতিত্বের সাথে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা শেষে আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়ে থিওলজি বিভাগে ভর্তি হন। আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে একইসাথে তিনি মসজিদে ইমামতি ও মাদরাসায় শিক্ষকতা করতেন। আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স ডিগ্রী লাভ করার পর হাদীস বিভাগে মাস্টার্সে ভর্তি হন এবং খাতীব আল বাগদাদীর বিখ্যাত গ্রন্থ شرف أصحاب الحديث-এর মুহাক্কিক প্রখ্যাত হাদীস শাস্ত্রবিদ প্রফেসর ড. সাঈদ হাতীবওলুর অধীনে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। তাঁর মাস্টার্সের থিসিস ছিল, মুসা জারুল্লাহ বিগিয়েফের চিন্তা ও দর্শন। মাস্টার্স করার সময়ে তিনি মিশরে গমন করেন এবং কায়রো বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণা করেন। কায়রোতে অবস্থান করার সময় মিশরের স্বনামধন্য ফকীহ মুহাম্মাদ সেলিম আল-আরওয়াহ এবং প্রখ্যাত মুহাদ্দিস রিফাত ফাওজীর কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করেন। এক বছর কায়রোতে অবস্থান করার পর পুনরায় তুরস্কে ফিরে আসেন এবং ফিরে এসে পুনরায় আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডক্টরেট (PhD) শুরু করেন। ১৯৯৪ সালে কৃতিত্বের সাথে তিনি তাঁর PhD শেষ করেন। তার PhD এর থিসিস ছিল সুন্নত ও হাদীস বুঝা এবং ব্যাখ্যা করার ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত সমস্যা। ডক্টরেট করার সময় তিনি এক বছর লন্ডনে অবস্থান করেন এবং সেখানে স্কুল অফ অরিয়েন্টাল এন্ড আফ্রিকান স্টাডিজ এ গবেষক হিসেবে কাজ করেন। তাঁর এই থিসিস ১৯৯৬ সালে তুরস্কের ইসলামিক ফাউন্ডেশন এর গবেষণা বিভাগে প্রথম স্থান অর্জন করে এবং সে বছর এই গবেষণার জন্য তুর্কী সরকার তাকে গবেষণা পুরস্কার প্রদান করে। তার এই থিসিসটি আরবী ও ইংরেজি ভাষায় অনূদিত হয়েছে। এই থিসিসের কারণে তিনি তাঁর একাডেমিক জীবনের অধিকাংশ সময়ই `উসূলে ফিক্হ’ এর ক্ষেত্রে ব্যয় করেন এবং এই সময়ে তিনি একজন উসূলবিদ হয়ে উঠেন। এযাবৎকাল পর্যন্ত তিনি পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের বড় বড় মুহাদ্দিস, উসূলবিদ, আলেমগণের সান্নিধ্য লাভ করেছেন ও বিভিন্ন গবেষণায় তাদের থেকে বহু জ্ঞান অর্জন করেন। এছাড়াও উসমানী ধারার বড় বড় দার্শনিকদের সান্নিধ্যে দীর্ঘসময় পড়াশোনা করেন। তিনি আহমেদ ইয়েসেভি বিশ্ববিদ্যালয়, হাজেত্তেপে বিশ্ববিদ্যালয় এবং আঙ্কারা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়, ইন্সটিটিউট ও গবেষণা কেন্দ্রে শিক্ষকতা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করার পাশাপাশি তিনি অন্যান্য ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেন। যেমন, `ইসলাম শিক্ষা গবেষণা কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা রাখেন এবং তুরস্কের ইসলামী আন্দোলনের মহান নেতা প্রফেসর ড. নাজমুদ্দিন এরবাকান এর সাথে দীর্ঘদিন কাজ করেন। ২০০৩ সালে তিনি Presidency of the Republic of Turkey Presidency of Religious Affairs -এর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে যোগদান করেন এবং এই দায়িত্ব পালন কালে একইসাথে তিনি শিক্ষকতাও জারি রাখেন এবং ২০০৬ সালে প্রফেসর হন। তিনি দীর্ঘ ৭ বছর এই Religious Affairs এর ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন কালে সমগ্র মুসলিম উম্মাহর সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেন এবং মুসলিম উম্মাহকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করেন। ২০১০ সালে তাকে Religious Affairs এর প্রেসিডেন্ট বানানো হয় এবং ২০১৭ সাল পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেন। কিন্তু দায়িত্ব পালন কালেও তিনি তাঁর গবেষণা চালিয়ে যান এবং এক মুহূর্তের জন্য জ্ঞান গবেষণায় বিরতি দেননি। এই সময়ে তিনি মুসলিম উম্মাহর গুরুত্বপূর্ণ আলেমদের সাথে সু-সম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং তাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য কার্যকরী ভ‚মিকা পালন করেন। গাজা, আরাকান, সোমালিয়া, সুদান, মধ্য এশিয়া এবং বলকান অঞ্চলের মুসলমানদের সমস্যা সমাধান করার জন্য অনেক পরিকল্পনা গ্রহণ করেন এবং তা বাস্তবায়নের জন্য প্রচেষ্টা চালান। তিনি Religious Affairs এর প্রেসিডেন্ট থাকা অবস্থায় অবরুদ্ধ গাজা সফর করেন এবং সেখানে হামাস নেতা ইসমাইল হানিয়ার সাথে সাক্ষাৎ করে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা সংগ্রামের পক্ষে সংহতি ঘোষণা করেন। গাজাতে অবস্থানকালে তিনি অবরুদ্ধ গাজাবাসীর খোঁজ খবর নেন এবং সেখান থেকে বের হয়ে বাইতুল মুকাদ্দাসে যান এবং ঐতিহাসিক এক খুতবা পেশ করেন। ২০১৭ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন এবং দুটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। একটি হলো International Islamic Thought Foundation অপরটি হলো Institute of Islamic Thought। বর্তমানে তিনি এই প্রতিষ্ঠান দুটির প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।