Published
May 8, 2025
Language
বাংলা
Pages
30
Published by
বইটইতকিদা, ভালবাসা কি? কষ্ট হবে জেনেও, মানুষ কেনো ভালবাসে? আমি হেসে বললাম, "ফুলকি, ভালবাসা কেউ জেনে বুঝে করে না, শুধু হয়ে যায়।" যাকে ভালবাসে, তাকে না দেখলে ভালো লাগেনা। তার সাথে কথা বলতে না পারলে অস্থির লাগে। দম আটকে আসে। তার সামনে নিজেকে পরিপাটি করে রাখতে মন চায়। গান গাইতে ইচ্ছা করে, কবিতা লিখতে ইচ্ছা করে… আরো কত কি… তুমি কাউকে ভালবেসেছো, তকিদা… ফুলকির সরাসরি প্রশ্নে ভাবনায় পড়ে যাই আমি… কি জানি, বলতে পারব না। না মনে হয়… আসলে সেরকম করে কখনো ভেবে দেখিনি। পরদিন গিয়ে দেখি, ফুলকি খুব সুন্দর করে সেজে আছে। ওর কাছে তো আর সাজানোর কোনো জিনিস নেই। ওর কোমড় ছুঁই ছুঁই গহীন রাতের গাঙের মতো ঘন কালো খোলা চুল। কি জানি, কেনো চিকচিক করছিলো সেদিন। ঝিলের টলমল জলের মতো চোখে, চামচে পাতা কাজল লেপ্টে আছে। ঠোঁটে মনে হয়, বেশ করে টকটকে লাল গোলাপের পাপড়ি ঘষেছে। গায়ে ওর মার পুরোনো একটা লাল টুকটুকে শাড়ি পেঁচিয়ে রেখেছে কোনোমতে। পূর্ণিমার রাতে, সাগর তীরের ঢেউ, যেমন করে ঝিলিক দেয়, ঠিক তেমনি শাড়ির পাতলা আবরণের ভেতর থেকে ফুলকির ঢেউ খেলানো বুক ওর নিশ্বাসের সাথে সাথে যতবার উঠা নামা করছিলো, তার সেই সৌন্দর্য আমাকে পাগল করছিলো। আগেও তো দেখেছি ফুলকিকে, এমনই আনকোরা এক প্যাচে শাড়িতে, কই একবারও তো এমন কিছু মনে হয়নি। আজ যেনো প্রথমবার লক্ষ্য করলাম, ওর শরীরের প্রতিটি রোয়ায় রোয়ায় যেনো যৌবনের বান ডেকেছে। ফুলকিকে যত দেখছিলাম, আমার গা জ্বালা করছিলো। কান গরম হয়ে যাচ্ছিলো। কোনো কারণে ফুলকির সাথে হাতের ছোয়া যেনো কারেন্ট শকের মতো লাগছিলো। হঠাৎ কোনো কথায় হাসতে হাসতে অকপটে ফুলকি বলে উঠলো, "তকিদা, আমি মনে হয় তোমাকে ভালবাসি। আমার তোমাকে না দেখলে মন কেমন কেমন করে। তোমার সাথে কথা না বললে একদম ভালো লাগে না। তোমার কি এমন লাগে?" আমার তখন আর স্বাভাবিকভাবে ভাবার কোনো ক্ষমতাই ছিলো না। ফুলকির সেই গাঢ় চোখে ডুবে গিয়েছিলাম আমি। পাগলের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম ওর উপর। বহুদিনের ক্ষুধার্ত কোনো সিংহ যেনো হঠাৎ করে পেয়েছে এক মায়া হরিণের দেখা। ফুলকি আমাকে বাধা দেয়নি। দিলেও হয়তো আমি মানতাম না। এরপর থেকে আমাদের মিলন আরও বেশি রঙিন, আরও বেশি মধুর। ফুলকি না হলে সমাজ ছাড়া। ওর কাছে আমাদের সম্পর্ক ওর মাথার উপরের বিশাল নীল আকাশ আর কূল কিনারাহীন সমুদ্রসম নদীর মতোই পবিত্র। কিন্তু আমি তো জানি, এটা ঠিক হচ্ছে না। আমার ফুলকিকে বিয়ে করা উচিত। কিন্তু আমার বাবা-মাকে কি করে বলবো যে পুরো গ্রামে যে মেয়ে পাগলি নামে পরিচিত, তাকেই আমি ভালবাসি, বিয়ে করতে চাই। গ্রামের লোকেরা তো আমার বাবা-মাকেও একঘরে করে দিবে। বাড়িতে আমার ছোট বোন, ওরও বিয়ে হবে না। এসব ভেবেই আমি ফুলকির কাছে যাওয়া বন্ধ করে দিলাম। ভাবলাম, হয়তো একদিন ও আমাকে ভুলে যাবে। যেদিন আমি ওকে বললাম, "ফুলকি, কাল থেকে আমি আর আসবো না। আমার বোনের বিয়ের কথা চলছে।" একটুও কাঁদেনি, এমনকি অবাকও হয়নি ও। ও যেনো জানতোই, যেমন করে হঠাৎ আমি ওর জীবনে এসেছিলাম, ঠিক তেমন করে হঠাৎই একদিন হারিয়ে যাবো।