পাশের রুমে শাবাব ব্যাগপত্র গুছিয়ে নিচ্ছে। গ্রাজুয়েশন করতে আমেরিকা যাবে। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ও এপ্লাই ফিজিক্সে চান্স পেয়েছে। দিব্যি এখান থেকে গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে পিএইচডি প্রোগ্রামে আমেরিকা যেতে পারতো। না, তার এখনই যাওয়া লাগবে। অথচ একজন সিঙ্গেল মাদার হিসেবে আমি ওকে কিছুদিন লালন-পালন করতে গিয়ে কতটা ঝড়ঝাপটা সয়েছি, আমি জানি। তখন আমার বয়স বিশ বছর ছিল। এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে মুশফিকের সাথে বিয়ে হয়। মায়ের মন রক্ষার্থে আমাকে বিয়ে করেছিল। ওর একজনের সাথে সম্পর্ক ছিল। ওর মায়ের ক্যান্সার ধরা পড়েছিল। ডাক্তার বলেছে, আর বেশিদিন আয়ু নেই। ওর সাথে আমার কথা হয়েছিলো, মায়ের মৃত্যুর পর আমাকে আমার কাবিনের পাঁচ লাখ টাকা সাথে আরো কিছু অর্থ দিয়ে আমাকে ডিভোর্স দিবে। আমিও ওর শর্তে রাজি হই। তারপর কিছুদিনের মধ্যে ওর মা মারা যায়। কিন্তু ও তখন ডিভোর্স নিয়ে টালবাহানা শুরু করে, আবার ওদিকে ওর সম্পর্ক চালাতে থাকে। আমি এই ঝুলন্ত সম্পর্কে আর থাকতে চাইছিলাম না। সে কারণে ওকে ডিভোর্স দিতে বলি। এরপর আমার জীবনে নেমে আসে এক দুঃসহ রাত। আমি ম্যারিটাল রেপের স্বীকার হই। পরে এক বুক অপমান নিয়ে এক কাক ডাকা ভোরে ও বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসি। মুশফিককে ডিভোর্স দেই। শুরু হয় একলা পথ চলা। এরপর লেখা পড়া শেষ করি। ওর যখন সাত বছর বয়স, তখন রাহাতকে আমি নিজের পছন্দে বিয়ে করি। এরপর আমার চাকরি, পাশাপাশি শাবাবকে বড় করে তোলা। আপাত দৃষ্টিতে সহজ মনে হলেও কাজটা সহজ ছিল না। আজ এতোদিন পর পিতৃত্বের দাবি, পাশাপাশি আমেরিকা যাওয়ার রেড পাসপোর্টের লোভ দেখিয়ে মুশফিক শাবাবের সামনে হাজির হলো। কষ্টে আমার বুকের ভিতরটা সহস্র খণ্ডে বিভক্ত হতে থাকে। বাকিটা জানতে পাঠকদের বইটা পড়ার আমন্ত্রণ রইলো।