বিবর্ণ স্বাধীনতা বইটির মধ্য দিয়ে লেখিকা শম্পা সাহার সাহিত্য জগতে প্রবেশ। বিভিন্ন সময় দৈনিক জনকণ্ঠে প্রকাশিত গল্পগুলো নিয়েই বিবর্ণ স্বাধীনতা। তার ক্ষুরধার লেখা প্রমাণ করে দেয় তিনি একজন জীবনবোধ সম্পন্ন লেখিকা। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতিত এক নারীর জীবনের কথা বর্ণিত হয়েছে, বিবর্ণ স্বাধীনতা গল্পটিতে। এদেশে নির্যাতিতদের সামাজিক অবস্থান তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘হায়রে দেশ! ৩০লক্ষ শহীদের স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য তৈরি হয়েছে স্মৃতিসৌধ, অথচ দেশের কোথাও কোনো প্রান্তে বীরাঙ্গনা শব্দটি উচ্চারিত পর্যন্ত হয়নি’। এতই ঘৃণিত, অস্পৃশ্য তাঁরা, ৭১এর লক্ষ লক্ষ ধর্ষিত, অত্যাচারিত নারীরা আজ কোথায়? এদেশের মাটিতে, এদেশের পতাকায়, এদেশের জাতীয় সঙ্গীতে, যাদের অগ্রাধিকার এদেশ তাদের বানিয়েছে বহু ভোগ্যা, বেশ্যা ও পতিতা। একটি রাতের কাহিনী বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত দুই ধর্মের তরুণ তরুণীর ভালবাসার গল্প হলেও এর মধ্য দিয়ে এদেশের বাস্তব চিত্রটিই তুলে ধরেছেন তিনি। তাইত, সাহসিকতার সাথে নির্ভিক চিত্তে তিনি প্রশ্ন করেছেন স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মাতৃভূমিকে রক্ষার জন্য হিন্দুরা কি পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি? এদেশের হাজার হাজার হিন্দু মেয়ে কি পাকিস্তানি সেনাদের হাতে ধর্ষিত হয়নি? তবু আজও কেন আমরা অত্যাচারিত হই? আকাশ ভাঙা বৃষ্টি তে হারানো ভালবাসার মাঝে মাদকাসক্ত ছিন্নমূল শিশু, নপুংশক, ভাসমান পতিতা সবাইকে তুলে এনেছেন তিনি। ঘটনার বাস্তবতা, গভীর জীবনবোধ ও তীক্ষ্ণ অনুভূতি নিয়ে লেখা গল্পগুলো পাঠকের চিন্তা ও চেতনাকে জাগিয়ে তুলবে বলেই আমার বিশ্বাস। আমি লেখিকার সর্বাঙ্গীন মঙ্গল ও সাফল্য কামনা করি। ----নন্দিনী লুইজা