সাদাত নিজেকে আবিষ্কার করল বিশাল এক প্রান্তরে! চারপাশে ধোঁয়াশায় ঢাকা বিরান এক প্রান্তর। যার কোন আদ্যোপান্ত নেই, নেই কোন শুরু বা শেষ! ঘুরে ঘুরে কালো কুণ্ডলী পাকিয়ে ওপরে উঠে যাচ্ছে ধোঁয়াশার কলাম। ঘূর্ণিপাক খেতে খেতে হারিয়েও যাচ্ছে। কোত্থেকে আসছে আর কোথায় যাচ্ছে বোঝার উপায় নেই। নিজের শরীরের দিকে চোখ যেতে লক্ষ করল সাদাত—সম্পূর্ণ নগ্ন ও! বিষয়টা বোধগম্য হওয়া মাত্র তীব্র শীতের একটা দমক বয়ে গেল ওর সর্বাঙ্গ জুড়ে, রীতিমত কাঁপুনি ধরে গেল সারা গায়ে। অথচ একটু আগেও তাপমাত্রায় কোন অস্বাভাবিকতা টের পায়নি। দাঁতে দাঁতে বাড়ি খেতে শুরু করল ওর। ধীরে মাথা ঘুরিয়ে এদিক ওদিক তাকাল সাদাত। ঝড়ো বাতাসে বাঁশঝাড় যেমন কাঁপে তেমনিভাবে কাঁপছে ওর শরীরটা, এক একটা অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেন এক এক রকম মাত্রার শীত অনুভব করছে! সর্বগ্রাসী হিম ওকে ক্রমশ গ্রাস করতে শুরু করল। দিশেহারা বোধ করছে ও, আকস্মিকতা কেটে গিয়ে নিজের অসহায়ত্ব অনুভব করতে শুরু করেছে। একটু উত্তাপ খুব দরকার, একটু উষ্ণতা! চিন্তাটা ওর মাথার মধ্যে প্রবাহিত হওয়া মাত্র অনুভব করল ওর শরীরের ওপর গড়িয়ে পড়তে শুরু করেছে আরামদায়ক ঈষৎ গরম কোন তরল। চমকে আবার নিজের দেহের দিকে তাকাল সাদাত—লাল! এক পলকেই বুঝতে পারল যে তরলের উষ্ণ ধারা ওর সারা গা ঢেকে দিয়েছে তা আর কিছুই না—রক্ত! এতটাই গরম, যেন সদ্য চেড়া ধমনী থেকে ফিনকী দিয়ে বেরিয়ে এসেছে সেই শোণিত ধারা! স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে গায়ে এমন রক্ত এসে পড়লে আতঙ্কিত হত ও, কিন্তু এখন এই চরম ঠাণ্ডার মাঝে আক্ষরিক অর্থেই রক্ত-স্নান মাধ্যমে অর্জিত হলেও উষ্ণতার সান্নিধ্য পেয়ে ধন্যবোধ করল সাদাত। শারীরিক আরাম বা বলা ভাল কষ্টের লাঘবের ফলে অনুভূত ইন্দ্রিয়সুখ ওর মনস্তাত্ত্বিক ভীতি আর অস্বস্তিকে অনেকটাই প্রশমিত করল। নতুন করে পরিস্থিতি বিচারের লক্ষ্যে চারপাশে তাকানোর প্রয়াস পেল সাদাত। ধোঁয়াশা ঘেরা এই কালচে ধূসর জগতের হালচাল ওর বোধগম্য হচ্ছে না। ঘুরে পেছনে দেখতে গেল ও, এবং স্থবির হয়ে পড়ল। বেমালুম জমে গেল জায়গায়, যেন পাথর কুঁদে তৈরি কোন মূর্তি।