আমাদের মুক্তিযুদ্ধও কি এক প্রকার স্বপ্ন? নইলে আর স্বপ্নভঙ্গের বেদনার কথা আসে কেন? ভাঙতে ভাঙতে নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার আগে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্নই বা রচনা করে কী করে? ঘুরে দাঁড়ানোর এই স্বপ্ন রচনা কি তবে কেবলই ভাঙা স্বপ্নের জোড়াতালি? এ উপন্যাসের মূল চরিত্র শওকত আলী মোটেই স্বপ্নবিহ্বল নয়, তবুও যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে রাজনৈতিক উত্থান পতন ও উল্লস্ফন দেখে, নতুনমাত্রার শোষণ-লুণ্ঠনের চিত্র দেখে স্বপ্নভঙ্গের সাগরতরঙ্গ আছড়ে পড়ে তার বুকে। কিন্তু সেই তরঙ্গ যে একদিন তাকেও ভাসিয়ে নিয়ে যাবে অতলে এবং সেই ডুবন্তদশা থেকে উদ্ধারলাভের আশায় আবার কখনো তাকে হাত বাড়াতে হতে পারে বিপথগামী পুত্র স্বপনের দর্পিত হাতের আঙুল ধরার জন্যে, এ কথা কেউ কোনোদিন ভাবেনি। অথচ বাস্তবে তাই হয়েছে। একদিন নষ্ট পুত্রের বিষাক্ত বাহুপাশ থেকে নিজেকে মুক্ত করে শওকত আলী ফিরে যায় তার জন্মগ্রামে, যে গ্রামে ঘুমিয়ে আছে তার শহীদ পিতা, সেই মাটিতে পা রেখে আবারও ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন রচনা করতে গিয়ে সে মুখোমুখি হয় আরেক বাস্তবতার; তখন নিজের ছায়ার দিকে তাকিয়ে নিজেই ভয়ানক চমকে ওঠে। বৈরী ছায়ার সঙ্গে আত্মঘাতী লড়াইয়ের ফলে ঘটে চলে দৃশ্যাতীত রক্তক্ষরণ এবং বিপর্যয়। রফিকুর রশীদের ব্যতিক্রমী উপন্যাস ‘ছায়ার পতুল’-এর মনোযোগী পাঠক তখনই শুনতে পায় ছায়াযুদ্ধে পর্যুদস্ত এক মুক্তিযোদ্ধার অন্তরে মর্মরিত হাহাকার ও আর্তনাদ। শুনতে পায় এবং পাঠকও তারই সঙ্গে একাকার হয়ে যায়।