'মাইয়ার গায়ে তো খালি হাড্ডির ওপর চামড়া বসায় রাখসে। ও সামু, তোর মায়, কি বউ বিয়া করায় আনলো মইনের লাইগা?' বিয়েতে আগত এক মুরুব্বির কথা শুনে চমকে উঠলো মিরা। সে শুকনো, অনেক শুকনো। তবে মইনের সাথে তার দেখে শুনে বিয়ে হয়েছে। মইনরা রীতিমত ছয় সাত বার করে এসে মিরাকে দেখে গেছে৷ বিয়ের আগে মইনের সাথে মিরা ঘুরতে গেছে। ঘোরার সময় মিরার কাঁধে, পিঠে মইনের হাত চলেনি৷ মিরা মইনের এই ব্যবহারে মুগ্ধ। এমন পুরুষ সচরাচর দেখা যায় না। কলিগ রিমুর বর বিয়ের আগে ওকে নিয়ে রিসোর্ট ঘুরে এসেছে৷ সেখানে মিরার স্কুলে এসে মইন বসে থাকতো। কলিগরা এই নিয়ে কত হাসাহাসি। মিরা নিঃশ্বাস চেপে যায়। থাক, লোকে কি বললো না বললো তা নিয়ে ভেবে কাজ নেই। তার সংসার মইনের সাথে। মইনকে সুখে রাখা মিরার কাজ। মইনের মা বাবা মিরাকে বেশ আদর করেছেন। বোন সুমাইয়াও ‘ভাবী’ বলতে অজ্ঞান। দিনে দুইবার ফোন করে মিরার খবর নিয়েছে। সুমাইয়াকে ডাকলো মিরা, 'পানি খাবো'। কাঁচের গ্লাসে করে বরফ শীতল পানি এনে দিলো সুমাইয়া, 'খাও ভাবী। ভাইয়ার আসতে দেরী হবে। কাজিনরা সবাই গল্প করছে। তুমি চাইলে যেতে পারো। ' মুরুব্বি সুমাইয়ার কথা ধরে বসলেন। যেন এই সুযোগের অপেক্ষায় ছিলেন। মিরার এত তাড়া কেন। দেখতে সুন্দরী হলে পুরুষ মানুষ দৌড়ে চলে আসে। মেয়ে মানুষ মরা লাশ হলে তারে দেখলেও বিবমিষা জাগে। 'আইব কিয়ের টানে। পাডকাডির উপ্রে শাড়ি পিন্দায় থুইছে। পুলার কি আর ভালা লাগে?’ খালা শাশুড়ী মুখে আরেকটা পান ঢুকিয়ে মিরার দিকে থেকে মুখ ঘুরিয়ে উল্টো পাশে পিক ফেলার জায়গা খুঁজছে। মিরা শাড়ি দিয়ে শরীরের খোলা অংশ ঘুরে ফেললো। শরীরটা তার অথচ ঘৃণা জাগাচ্ছে অন্য আরেকজন। কি অদ্ভুত এই সমাজ আর তার নারী নামক বিচ্ছিরি মানবীরা। সুমাইয়া খালা শাশুড়ির মুখে মুখে উত্তর করলো এবারে, 'বউ মইন ভাইয়ের। আপনি এত চিন্তা করেন না খালা।‘ ‘তোর মায়েরে ডাক। বউয়ের বাড়ি থেকে মিষ্টি মন্ডা কি দিলো দেখি।‘ ‘ঐ ঘরে গিয়ে দেখেন। এখন যাও এখান থেকে। ‘ ‘আমারো তাড়াইলে কি আর মানুষের মুখ থামব?’ ‘ এসব শুনে ভাবীর কষ্ট হয়’ ‘হাচা কতার স্বাদ তিতা। জগতের লোকের কথা থামাইতে পারবি না। ‘ কি প্লান করে আসছো, এসব বলবে? খালা শাশুড়ী রেগে গেছেন, 'হ রে, বিয়া তো হেয় একলাই করসে। আমাগো দেখবার কালে একনার নিবার পারলো না। তাইলে কি আর এমুন পাডকাডি মার্কা বউ জুডে? থাক বাবা যাই গিয়া। তগো বউ, তগো বাড়ি। আমি কেডা, মেমান দুই দিনের।' 'তাই যান। আম্মু পান সাজিয়ে রেখেছে। আপনার প্রিয় সিরিয়ালের রিপিট চলছে, দেখেন গিয়ে'। ননদের কথায় মিরা পা ছড়িয়ে বসে। সকাল বেলা পার্লারে গিয়ে সেজেছে। এখন বাজে রাত এগারোটা। মিরার মাথা ধরে গেছে। মইনের জন্য অপেক্ষা করে লাভ নেই। হয়ত, অনেক রাতে এসে সরি বলে নেবে। মিরার মনে হলো, এক কাপ কড়া লিকারের লেবু চা খেলে ভালো লাগতো। সুমাইয়াকে বলতে গিয়ে দেখলো, সুমাইয়া চলে গেছে। ফ্রেশ হয়ে রিমুভার দিয়ে নখ পরিষ্কার করে মিরা। পার্লারে চুল সেট করতে দেয়নি। ফলে, চুল খোলার ঝামেলা থেকে মুক্তি পাওয়া গেছে। মিরা খোলা চুল এলিয়ে বাতি নিভিয়ে বিছানায় শুয়ে পরে। চোখ প্রায় লেগে এসেছে, মিরা টের পায় কেউ ঘরে হাঁটছে। মিরা খেয়াল করে, ড্রেসিংটেবিলের ওপর বাক্স থেকে মইনের মা এক এক করে সমস্ত গহনা ওনার আঁচলে পুটুলি করে বাঁধলেন। নিজেদের দেয়া গহনা ধরলেন না। তারপর মিরার ক্রিমের কৌটা, স্নো সব ধরে ধরে দেখে রেখে দিলেন। পা টিপে মিরার কাছে এগিয়ে এসে ঝু্ঁকে পরে দেখেন মইনের মা। ওনাকে কাছে এগিয়ে আসতে দেখে মীরা চোখ খোলে। শাশুড়ি ভীষণ রকম খুশিয়াল কন্ঠে বললেন, 'আজকে শুধাশুধি হোটেল গিয়া টাকা নষ্ট করতো মইন। ছেলে মানুষ একটা রাত বউ সহ বাড়িতে কাটাক। এমনিতে কিছুদিন পর তো হানিমুনে যাবা তোমরা৷' মিরা শাশুড়ির হ্যাঁ তে হ্যাঁ মেলালো। মইন তাকে সারপ্রাইজ দিতে বলেছিলো,' র্যডিসনের হানিমুন সুইটসে তাদের বাসর হবে।' কিন্ত, এখন! উনি আছে আড্ডায়, বেমালুম ভুলে গেছে, আমি এখানে একা বসে আছি। ' শাশুড়ি মিরার গহনার বাক্সটা সামনে ধরেন, 'এইখানে কেউ এত গুলা গয়না রাখে, বোকা মেয়ে। শোন, আমি এগুলা নিয়া গেলাম। আলমারিতে উঠায় রাখব কিছু, কিছু লুকায় রাখবো। বাসা ভর্তি মেহমান। কার মনে কি আছে কওয়া যায়? মিরা মাথা দোলায়। আম্মা ভুল কিছু বলেন নাই। তবু, সাহস করে বলে, 'গহনা গুলো সুটকেসে তুলে তালা আটকে রাখব আম্মা। সব তো আমার আব্বার বাড়ির দেয়া। ওগুলো না হয়, থাকুক এখানে'। মইনের মা এবার আদেশ করেন, 'বেশী কথা বইলো না মইনের বউ। আজকে আইসাই নিজের মত দিতে শুরু করসো। আরো তো দিন আছে। ' মিরা চুপ করে যায়। মইনের কাছে বলবে কি না চিন্তা করে। শাশুড়ী তাকে চুপ করে থাকতে দেখে আবার বলেন, 'মইনরের মাথায় এই সব জঞ্জাল হান্দবা না। সে ছেলে মানুষ। সুখ পাইতে বিয়া করসে। তোমার কাজ হইলো, স্বামীর মন জুগায় চলা। বড়দের কথা শুনা। তা না, তুমি নিজের কথা বলতে লাগছো। আর, এত গয়না তোমার কাছে রাখার দরকার নাই। আমি নিসি, গুছায় রাখব। কোনো খানে যাইতে লাগলে নিয়া পরবা। আমি কি তোমার গয়না খায়া ফেলবো?'
Mira meyetar jonno prothome onk kharap legwchilo.ses a shanri pelam pore.onk sundor chilo
Read all reviews on the Boitoi app
অসাধারণ
ভালো লাগলো গল্পটা।
লেখনী ভালো তবে কোন কোন জায়গায় অতি নাটকীয় মনে হয়েছে।
সুন্দর ☕
Onek vhalo lage
পরিচিত কাহিনি, লেখিকার লেখার গুণে ভালোই লাগল।
Chamatkar ekta golpo. Jara bhalo golpo pochhondo koren, eta porte paren.
ভালো লাগলো।
চমৎকার লাগলো। আপুর লেখা বরাবরই দারুণ লাগে। মিরা মতো হাজারো মেয়ে আমাদের চারপাশে ঘুরে বেড়ায় কিন্তু সবাই মইন হয় না এটাও সত্য। গল্পের শেষটায় শান্তি পেলাম যদি শুধু শাস্তি বা ডিভোর্স হতো তাহলে ভালো লাগত না। মিরার সিদ্ধান্ত অন্যরকম স্বস্তি দিলো। রানাকে ভালো লাগছে। তবে মইনের বাবা-মার শাস্তিটা দেখার ইচ্ছে ছিলো। সব মিলিয়ে ঝরঝরে সাবলীল লেখায় সামাজিক প্লটে দারুণ একটা গল্প।