বার বাড়ির উঠোনে দশটি তাগড়া ঘোড়া সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে । ঘোড়ার পিঠে দশজন সাওয়ার । সারির প্রথম ঘোড়াটি অন্যান্য ঘোড়াগুলির চেয়ে হৃষ্টপুষ্ট । প্রথম ঘোড়ার ওপর বসা লোকটিও বেশ তাগড়া ও জোয়ান । ইনিই যে সেই কুক্ষাত ডাকাত আব্দুল্লা তা বুঝতে অসুবিধা হলো না না ভূতের । সে পালোয়ানরূপী হাঁ ভূত এবং তুজাম মণ্ডল রূপী না ভূতকে দেখে চিৎকারের গলায় বলল , তুমি তুজাম মণ্ডল না ? তুজাম মণ্ডলরূপী না ভূত মার্জিত ভাষায় এবং মোলায়েম গলায় বলল , জি জনাব , আমিই তুজাম মণ্ডল । আব্দুল্লা ডাকাত গমগমে গলায় বলল , তুমি আমার চিঠি পেয়েছ ? জি , জনাব । পেয়েছি । তাহলে আমাকে গুলি ছুঁড়তে হলো কেন ? বন্দুক চালিয়ে কেন আমাকে জানাতে হলো যে আমি এসেছি ? তুজাম মণ্ডলরূপী না ভূত কম্পিত গলায় বলল , আমরা একটু পুকুরে নেমেছিলাম জনাব । পুকুরে নেমেছিলে কেন ? মাছ ধরতে জনাব । এতো রাতে পুকুরে নেমেছিলে মাছ ধরতে ! পাগল নাকি তুমি ? আমার প্রাপ্য উপঢৌকন নিয়ে আস , যাও । যা চেয়েছি তার কিঞ্চিত কম হলেও কিন্তু আমি তোমাকে ছাড়ব না । গুলি করে তোমার চান্দি ফুটো করে দেব । তুজাম মণ্ডলরূপী না ভূত বলল , এতো রাতে আপনার জন্য উপঢৌকন কোত্থেকে আনব জনাব ? আব্দুল্লা ডাকাত ঘোড়ার পিঠ থেকে নেমে গর্জে উঠে বলল , উপঢৌকন কোথায় পাবি মানে ? আমার পাওনা পঞ্চাশ হাজার টাকা এবং পাঁচ ভরি স্বর্ণ । খুব বেশি তো দাবি করিনি ? যদি জানে বাঁচতে চাচ তাহলে ওগুলো তাড়াতাড়ি এনে আমার হাতে দে । যা বলছি । তুজাম মণ্ডলরূপী না ভূত কপট মিনতির স্বরে বলল , ঘরে কোন টাকা পয়সা রাখি না জনাব । আমি কোন টাকা পয়সা সোনাদানা দিতে পারব না জনাব । আব্দুল্লা ডাকাত উচ্চ গ্রামের একটা ধমক বসিয়ে দিয়ে বলল , এতো জনাব জনাব করছিস কেন ? আমি আবার কীসের জনাব হলাম রে ? আমি হলাম আব্দুল্লা ডাকাত । বড় ডেঞ্জারাজ ! টাকা নিয়ে আয় শিগগির ! টাকা দিতে পারব না । টাকা দিতে পারবি না ? তুই কি তাহলে একটা ভিখিরি ? তুই কি মনে করেছিস আমি ভুল করে একটা ভিখিরির বাড়িতে ডাকাতি করতে এসেছি ? আমাকে কি তুই পাগল পেয়েছিস ? এই ছোবরা ওর পায়ে একটা গুলি কর তো । তুজাম মণ্ডলরূপী না ভূত হি-হি শব্দে হেসে বলল , পায়ে কেন , আমার মাথায় একশ একটা গুলি করলেও তোরা আজ একটা টাকাও পাবি না । আব্দুল্লা ডাকাত রাগে গজ গজ করতে করতে বলল , আমার সামনে দাঁড়িয়ে এতো বড় কথা ? তোর বুকের পাটা তো খুব বড় রে ! এই তোরা দাঁড়িয়ে থেকে দেখছিস কী ? এখনই ঝাঁঝরা করে দে ওর সাহসী বুকের পাটা । সোজা আঙ্গুলে ঘি উঠবে না । তুজাম মণ্ডলরূপী না ভূতের বুকের দিকে রাইফেল তাক করে ট্রিগার টিপল একজন ডাকাত । পরপর তিনটি গুলি ছুঁড়ল সে । গুলি খেয়ে একটুও টলছে না তুজাম মণ্ডলরূপী না ভূত । ধীরে পা ফেলে এগিয়ে আসছে আব্দুল্লার দিকে । আব্দুল্লা ডাকাত ওকে এগিয়ে আসতে দেখে খুবই বিস্মিত হলো । চোখদুটো ছানা বড়া হয়ে গেল তার । সে বিস্ময়াপন্ন গলায় বলল , ওর বুকের পাটা তো দেখছি সত্যিই বড় রে ছোবরা । তিনটি গুলি খাওয়ার পরও ও আমার দিকে কীভাবে হেঁটে আসছে রে ?